রাজারহাটের গোপালপুর বাবলাতলা এলাকায় ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ঘটনা। পরিবারে আর্থিক অনটনের জেরে আত্মহত্যার চেষ্টা। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দু’জনের, আর এক জন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবলাতলার একটি বাড়ির নিচতলায় স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন সঞ্জয় দে (৫৪) নামে এক ব্যক্তি। তিনি শেয়ার বাজারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। সঞ্জয়ের বাবা-মা ওই রাজারহাট এলাকাতেই অন্য একটি বাড়িতে থাকতেন। সঞ্জয়ের এক ভাই ও এক বোন রয়েছেন, তবে বোনের সঙ্গে দীর্ঘদিন কোনও সম্পর্ক ছিল না বলেই সঞ্জয় জানিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় সূত্রে খবর, গত মঙ্গলবারের পর থেকে সঞ্জয় ও তার পরিবারের কোনও খোঁজ মিলছিল না।
বাড়ির মালিক রূপম সাহা জানিয়েছেন, সকালে বাড়িতে সংবাদপত্র পড়ে থাকত, কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। হঠাৎই বৃহস্পতিবার সকালে ভাড়াটিয়ার ঘরের ভিতর থেকে গোঁ গোঁ শব্দ শুনে সন্দেহ হলে তিনি তৎক্ষণাৎ নারায়ণপুর থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখে, সঞ্জয়ের স্ত্রী ও শাশুড়ি মাটিতে অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এবং সঞ্জয় নিজে অসুস্থ অবস্থায় কাতরাচ্ছেন।তিনজনকেই আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, চিকিৎসকরা সঞ্জয়ের স্ত্রী ও শাশুড়িকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সঞ্জয় দে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সঞ্জয় জানিয়েছেন, শেয়ার বাজারে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে তিনি দেউলিয়া হয়ে পড়েছিলেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
তাঁর কথায়, দীর্ঘদিন ধরেই তার শাশুড়ি ঘুমের ওষুধ খেতেন, এবং তিনি নিজে প্রেসারের রোগী ছিলেন। প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে বিভিন্ন দোকান থেকে ঘুমের ওষুধ ও প্রেসারের ওষুধ সংগ্রহ করে তাঁরা তিনজনেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সঞ্জয়ের দাবি, প্রত্যেকে ১৫টি প্রেসারের ওষুধ এবং ৪০টি ঘুমের ওষুধ সেবন করেন। বাড়ির মালিক জানান, সঞ্জয় ও তার পরিবার গত ৯ মাস ধরে ভাড়া বাড়িতে থাকছিলেন এবং ১১ মাসের চুক্তি অনুযায়ী আরও দু’মাস ভাড়ার মেয়াদ ছিল। তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ বা অশান্তির কথা আগে কখনও ওঠেনি। তবে সম্প্রতি সঞ্জয় আর্থিক ক্ষতির কথা বলেছিলেন বলে জানান বাড়িওয়ালা। জানা যায়, গত সোমবার সঞ্জয়ের বাড়িতো কাজের লোক কাজ করে যান। তারা কাজের লোককে জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার থেকে তারা থাকবেন না, ঘুরতে যাবেন। এরপরেই মঙ্গলবার থেকে কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁদের।
এমনকি, ফোনও পাওয়া যায়নি। অবশেষে, বৃহস্পতিবার এই ঘটনা ঘটায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আশেপাশের এলাকাতেও। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। যদিও প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলেই মনে করা হচ্ছে, তবে শুধুমাত্র সঞ্জয় দে-র বেঁচে যাওয়া এবং বাকি দু’জনের মৃত্যু নিয়ে পুলিশের সন্দেহ রয়েছে। পুরো ঘটনার পেছনে অন্য কোনও রহস্য আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ স্পষ্ট হবে। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে।’ এই মর্মান্তিক ঘটনার জেরে রাজারহাট এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ গোটা ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছে।