বেহালার পর্ণশ্রীর চার বছরের শিশুর শরীরে মিলল কলেরার জীবাণু, তৎপর স্বাস্থ্যদপ্তর
আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহরে ফের খোঁজ মিলল কলেরা আক্রান্ত রোগীর। বেহালার পর্ণশ্রী এলাকার চার বছর বয়সী এক শিশুকন্যা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিশুটির চিকিৎসা করছেন হাসপাতালের শিশু বিভাগ ও পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (PICU)-এর ইনচার্জ ডাঃ সাহেলি দাশগুপ্ত।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটিকে উচ্চমাত্রার জ্বর, অতিরিক্ত পায়খানা ও বার বার বমি নিয়ে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকেরা একে তীব্র ডায়রিয়াজনিত রোগ হিসেবে শনাক্ত করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে একটি মল নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পরবর্তীতে পরীক্ষার রিপোর্টে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে, শিশুটি কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে তাকে যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক ও সহায়ক চিকিৎসা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কলেরা একটি অত্যন্ত সংক্রামক পেটের রোগ যা বর্তমানে বিরল হলেও, ঠিক মতো চিকিৎসা না হলে মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। এই রোগে সাধারণত জলের কারণে হয়। অতিরিক্ত মলত্যাগের ফলে দ্রুত শরীর থেকে জল ও লবণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যার ফলে হতে পারে ডিহাইড্রেশন, রক্তচাপ পতন এবং ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা।
আজকাল ডট ইন-এর মুখোমুখি হয়ে চিকিৎসক সহেলী দাশগুপ্ত বলেন, "এই চার বছরের শিশুটি গত ২ আগস্ট যখন ভর্তি হয় তখন তার খুব জ্বর, প্রচণ্ড পেটে ব্যথা এবং বমি হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে এলে তাকে ইমার্জেন্সি চিকিৎসা দিয়ে ওয়ার্ডে শিফট করা হয়েছে। অবস্থার ওপর নজর রাখা হচ্ছে এবং সে ধীরে ধীরে সাড়া দিচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুটির মল পরীক্ষা করে কলেরা রোগ চিহ্নিত হওয়ায় পর ঠিক মতো চিকিৎসা করা হয় এবং এখন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে অতিরিক্ত মলত্যাগ বন্ধ হয়েছে। তবে, বমির ভাব এখনও পর্যন্ত রয়েছে।” তবে বিপদের আশঙ্কা শিশুটি কাটিয়ে উঠেছে বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসক।
স্বাস্থ্যবিভাগ নাগরিকদের সতর্ক করে জানিয়েছে, বর্ষার মরসুমে খাদ্য ও পানীয়ের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। বিশুদ্ধ পানীয় জল ব্যবহার এবং রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। শিশুটির পরিবার ও চিকিৎসকরা আশাবাদী, দ্রুতই সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।
বর্ষা এলেই প্রতি বছর ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া এবং চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি ডায়েরিয়া, কলেরা এবং আমাশয়ের মতো রোগ মাথাচাড়া দেয়। কলেরার প্রকোপ এখন অনেক কম হলেও বর্ষাকালে তার দাপট বাড়ে। প্রতি বছর রাজ্য জুড়ে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায়। এর প্রধান কারণ দূষিত জল। বৃষ্টির জমা জল, পুকুর-নালার দূষিত জল থেকে আন্ত্রিক, ডায়েরিয়ার মতো রোগও ছড়াচ্ছে। পেটখারাপ, বমির সমস্যায় ভুগছেন অনেকে। ডিহাইড্রেশনও ভোগাচ্ছে।
চিকিৎসকদের মতে, বর্ষার সময় কলের জল সরাসরি পান করবেন না। জল ফুটিয়ে খাওয়া সবচেয়ে শ্রেয় এই সময়। এছাড়াও ওয়াটার ফিল্টার বা পিউরিফায়ারের জল খাওয়া উচিৎ। খোলা খাবার খাবেন না। ফ্রিজে বাসি খাবার অনেক দিন রেখে খাবেন না। পরিবারের কারও পেটের সমস্যা বা ঘন ঘন বমি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিন।