আজকাল ওয়েবডেস্ক: এনআরসি আতঙ্কে খাস কলকাতায় আত্মহত্যা করলেন এক ব্যক্তি। রবিবার সকালে রিজেন্ট পার্ক এলাকার আনন্দপল্লী পশ্চিমের বাসিন্দা দিলীপ সাহা নামে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের সদস্যদের দাবি, সম্প্রতি বিজেপি সরকার এনআরসি নিয়ে বিভিন্ন হুলিয়া জারি করার পর থেকে আতঙ্কে ভুগছিলেন ওই ব্যক্তি। তাঁর ভয় ছিল, হয়তো তাঁকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বাড়ি থেকে বেরোনোও একপ্রকার বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের দাবি, ঘর থেকে বেরোতেন না, টিভিতে এনআরসি নিয়ে ক্রমাগত ভয় থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। এরপরই পরিবারের এক সদস্যের ভিডিও সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে তৃণমূল। সেখানে বেলাগাম আক্রমণ করা হয় বিজেপি সরকারকে।
পোস্টে রাজ্যের শাসক দলের তরফে লেখা হয়, ‘বিজেপির আতঙ্কে আত্মহত্যা কলকাতার টালিগঞ্জের এক বাসিন্দার। বিজেপি দেশজুড়ে যেভাবে বাঙালি জাতির উপর আক্রমণ শুরু করেছে, বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও এনআরসির নোটিশ পাঠাচ্ছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে, SIR করে ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে - এই সকল কিছুর আতঙ্কে দিন গুজরান করতে করতে শেষমেষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন এক বাসিন্দা। একটা জনবিরোধী, বাংলা-বিরোধী দল কীভাবে বাঙালিকে শেষ করে দিতে চাইছে নিজের চোখেই দেখুন, ছিঃ বিজেপি ছিঃ’। তবে এই ঘটনায় কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি বিজেপির তরফে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে উত্তমকুমার ব্রজবাসী, নিশিকান্ত দাস, মোমিনা বিবির কাছে এনআরসি-র নোটিশ আসে। আলিপুরদুয়ারের অঞ্জলি শীল-এর কাছেও আসে এই নোটিশ। ওই চত্বরে সর্বশেষ নোটিশটি পেয়েছিলেন মোমিনা বিবি। অসম ট্রাইব্যুনাল-এর পাঠানো ওই নোটিশে বলা হয় মোমিনা বিবিকে হাজিরা দিতে হবে অসমের ধুবরিতে। বুধবার ৩০ জুলাই তিনি এই নোটিশ পেয়েছেন। পুলিশ এসে এই নোটিশ দিয়ে যায়। কীসের ভিত্তিতে এই নোটিশ তা বুঝতে পারছেন না তিনি। জানা যায়, নোটিশ পাওয়া মোমিনা বিবি তুফানগঞ্জ ২ নম্বর ব্লকের প্রথম খণ্ড বাঁশরাজা শালবাড়ির ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন ৯/২৬ নম্বর বুথ এলাকার বাসিন্দা।
এর আগে তিনি একাধিকবার নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করেছেন। নোটিশ পাওয়ার পর মানসিকভাবে বিদ্ধস্ত ও ক্ষুব্ধ মোমিনা বিবির প্রশ্ন, 'আর কতবার এবং কতজনের সামনে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করব'। নোটিশ আসার আগে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভোটার তালিকা, রেশন কার্ড, আধার কার্ড-সহ সমস্ত বৈধ নথি জমা দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও এনআরসি কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁকে এই নোটিশ পাঠানোর জন্য হতবাক তাঁর পরিবার। এর আগেই জেলার অন্যান্য বাসিন্দাদের কাছে নোটিশ আসায় সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন, নতুন করে আরও একজনের কাছে এই নোটিশ আসায় গোটা জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা ও ভয়। একের পর এক সাধারণ মানুষকে এই নোটিশ পাঠিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে উঠেছে অভিযোগ।