ভোররাতে ফোন পেয়েই ছুটল পুলিশ, দরজার ছিদ্র দিয়ে যে দৃশ্য দেখা গেল, ছিটকে গেলেন সবাই
আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহর তখনও ঘুমিয়ে, যখন জোড়াবাগান থানার ফোন বেজে উঠল। ভোর সওয়া ৪টে। বৃষ্টির মরসুমে হাওয়ায় ছিল একরকম অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। ফোনের ওপাশ থেকে একটি কাঁপা কণ্ঠস্বর বলে উঠল, “দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে একজন লোক ঘরের ভিতরে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ।”
ফোন পেয়েই কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক যখন ৩ নং, মানিক বোস ঘাট স্ট্রিটে পৌঁছলেন তখন আকাশ একটু একটু করে ফর্সা হচ্ছিল। কিন্তু গলিগুলোর গায় তখন অন্ধকার লেগে রয়েছে। পুরনো বাড়িটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে। রঙ উঠে গিয়েছে, জানলা আধখোলা। টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরের দরজাটা ভিতর থেকে আটকানো।
দরজার ওপরে ছোট ছিদ্রপথ দিয়ে দেখা গেল এক বিভীষিকাময় দৃশ্য। একটি পুরুষ দেহ, নিথরভাবে ছাদ থেকে ঝুলছে গলায় দড়ি দিয়ে। মাথা একদিকে হেলানো, চোখ বন্ধ, যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ঝুলন্ত অবস্থায়। এরপর পুলিশ দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে এবং গুণি যাদবের ঝুলন্ত দেহ ধীরে ধীরে নামিয়ে রাখা হল মেঝেতে।
মাত্র ৩৯ বছর বয়স। পেশায় রাঁধুনি। বিহারের বাসিন্দা, গ্রাম দোনিহার, পোস্ট অফিস মালবথান, থানা কাটোরিয়া, জেলা বাঁকা, বিহার। তবে কলকাতায় কাজের সূত্রে থাকতেন কলকাতার জোড়াবাগান থানা এলাকার মানিক বোস ঘাট স্ট্রিটে। এই ঘরে তাঁর সঙ্গে থাকতেন আরও দু'জন তাঁরই গ্রামের বাসিন্দা। এক সঙ্গে রান্না করতেন। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেন। হাসিখুশি ছিলেন বলেই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কিন্তু রবিবার রাতটা যেন সব কিছু পাল্টে দিয়েছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, গতকাল বাকি দু'জন ঘরে ফিরেছিল অনেক রাতে। দরজা ছিল বন্ধ। কোনও সাড়া নেই। খানিকক্ষণ চিন্তা করার পরে, এরপর তারা ফাঁকা জায়গা দিয়ে উঁকি মেরে দেখতেই হৃৎপিণ্ডে কাঁপুনি লাগে তাঁদের। দেখা যায় ঝুলন্ত অবস্থায় গুণির দেহ। এরপরই স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মৃতদেহটি উদ্ধার করে। তাঁরা ফোন করেছিলেন গুণির ভাইকেও। থাকেন ভবানীপুরে। ততক্ষণে যা কিছু আশা ছিল, তা প্রায় নিঃশেষ।
পুলিশ সূত্রে খবর, কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। কোনও ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই। কোনও শত্রুও ছিল না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে কোনও অজানা সমস্যা বা মানসিক অবসাদ ছিল কি না জানা যায়নি।
কেন গুণি এমনটা করল?
পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁর ভাই কিছুই জানেন না। আবাসিকরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। প্রতিবেশীরা, যারা অধিকাংশই শ্রমিক, জানিয়েছেন, ছেলেটা খুব চুপচাপ ছিল এবং খুবই ভদ্র। কাছেই এক হোটেলে কাজ করত। স্থানীয় সূত্রে খবর, সপ্তাহে দু'বার বাড়িতে ফোন করতেন। রোজ সকালে এখানে আসতেন চা খেতে। কোনও দিন কোনও কষ্টের কথা বলেননি।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের জন্য আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো মৃতদেহ পাঠানো হয়েছে। সন্দেহজনক কিছুরই প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর জানা যাবে হত্যা না কি আত্মহত্যা।