• রক্ষকই ভক্ষক! নারী নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাকে দিয়েই লিঙ্গ সংবেদনশীলতার পাঠ, ফের বিতর্কে সিপিএম কলকাতা জেলা
    আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে সিপিএম। নারী নিরাপত্তা ও লিঙ্গ সংবেদনশীলতার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দলীয় যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত একটি কর্মশালায় শিক্ষক হিসেবে হাজির হয়েছেন এক বিতর্কিত নেতা, যাঁর বিরুদ্ধে আগেই একাধিক নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি সামনে আসতেই ক্ষভ একেবারে প্রকাশ্যে। কেউ কেউ তো বিষয়টিকে নিজের ভিতরে চাপা না রেখে, প্রকাশ করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে। তাতে আবার নানা প্রতিক্রিয়া, তর্ক।

    ঘটনা আবর্তিত হয়েছে মূলত বেহালা পূর্ব এরিয়া কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই ‘লিঙ্গ সংবেদনশীলতা ও মেন্টাল হেলথ’ বিষয়ক কর্মশালা নিয়ে। ওই কর্মশালায় জেলার সভাপতি, যিনি এই অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে, তাকেই বক্তা হিসেবে রাখা হয়েছে—যা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন সংগঠনের একাংশ। কেন? এবং কোন যুক্তিতে, কীভাবে? দলের ভিতরেই আনান প্রশ্ন উঠছে ক্রমাগত।

    ক্ষোভের পরিমাণ এতটাই যে, সোজা সোশ্যাল মিডিয়ায় বামপন্থী সমর্থকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, "যেই রক্ষক সেই ভক্ষক?" এক বামপন্থী কর্মী নিজের পোস্টে লেখেন: "আমৃত্যু প্রতিবাদ চলবে, তাই আজও।' সঙ্গেই তিনি ওই বিতর্কিত নেতার নাম উল্লেখ করেই লেখেন, "...তার প্রেমিকাকে ধরে পেটায়, লিখিত অভিযোগ আছে আমার কাছে, তাকে ইনক্লুড করা হয়েছে মেন্টাল হেল্থ-এর বিষয়ে? কীভাবে এরা নিজেদের চোখে চোখ রেখে কথা বলে?"

    একইসঙ্গে কথা প্রসঙ্গে তুলে এনেছেন সম্প্রতি চর্চায় থাকা সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের প্রসঙ্গও। তিনি আরও প্রশ্ন তুলে লিখেছেন:  “এর নাম কী দেওয়া যায়? ম্যাঙ্গো তো অতীত, এবার অ্যাপেল? না কি পাইনঅ্যাপেল?”

    প্রসঙ্গত, বিতর্কিত ওই নেতা আলোচনার কেন্দ্রে এই প্রথম এমনটা নয়। তাঁর বিরুদ্ধে তাঁর এক ঘনিষ্ঠের সঙ্গে সহিংস আচরণের লিখিত অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করছেন সংগঠনের কিছু কর্মী। অথচ, তাঁকেই একটি লিঙ্গ সংবেদনশীলতা সংক্রান্ত শিক্ষামূলক সেশনে বক্তা হিসেবে রাখা হয়েছে, যেখানে ‘গুড টাচ’ আর ‘ব্যাড টাচ’-এর মতো বিষয় পড়ানো হচ্ছে—এই পরিস্থিতি ঘিরেই দলে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক তুঙ্গে।

    এই বিষয়ে ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট এরিয়া কমিটির এক মহিলা কর্মীকে ফোন করা হলে, তিনি আজকাল.ইন-কে জানান, "অফিসের কাজে ব্যস্ত রয়েছি, তাই এখন কথা বলা সম্ভব নয়।"

    কলকাতা জেলা সিপিএম এর আগেও অভ্যন্তরীণ নানা প্রশ্নে উত্তপ্ত হয়েছে—বিশেষত নারী কর্মীদের নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ অভিযোগ গঠনের স্বচ্ছতা এবং দলীয় নেতৃত্বের জবাবদিহিতা ঘিরে। এই ঘটনাও সেই দীর্ঘ বিতর্কেরই এক নতুন অধ্যায়।

    সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলের দায়িত্বজ্ঞানহীন ভূমিকার সমালোচনার পাশাপাশি, তৃণমূলের প্রতি একাংশের ‘নরম মনোভাব’ এবং মুখ্যমন্ত্রীর পুনঃনির্বাচনের সম্ভাব্য সুবিধা প্রদান নিয়েও অভিযোগ উঠেছে।

    এই ঘটনায় সিপিএম নেতৃত্বের এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে প্রশ্ন উঠছে—যেখানে সংগঠনের ভেতর থেকেই বারবার সতর্কবার্তা আসছে, সেখানে কেন অভিযুক্তদের দিয়ে এমন সংবেদনশীল বিষয়ে বক্তব্য রাখানো হচ্ছে?

    এটা কি শুধুই অবহেলা, নাকি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ মূল্যবোধেই চরম সংকট? বিতর্ক যতই গভীর হোক, উত্তর এখনও অধরাই।
  • Link to this news (আজকাল)