• কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ
    আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (সিইউ) স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের পথে হাঁটতে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাস বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় শূন্যপদ পূরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা সিন্ডিকেট বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি সনাতন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫২ শতাংশ শিক্ষকের পদ শূন্য। শূন্যপদের চাপেই নিয়মিত ক্লাস চালানো অসম্ভব হয়ে উঠছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ৮৩৫টি মঞ্জুরীকৃত পদের বিপরীতে মাত্র ৩৯৬ জন শিক্ষক রয়েছেন।

    একাধিক বিভাগে শিক্ষকের অভাব এতটাই প্রকট যে সিলেবাস শেষ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে কিছু শিক্ষক সম্প্রতি কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখান। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে রাজ্য সরকারের মনোনীত সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্র জানান, বৈঠকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা দরকার। গত কয়েক বছরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চালু ছিল, কিন্তু তা স্থায়ী সমাধান নয়। সংরক্ষণ বিধি মেনেই নিয়োগ হওয়া উচিত।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএটেক প্রোগ্রামের শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত অনুপযুক্ত হওয়ায়, বেশিরভাগ বিভাগই ন্যাশনাল বোর্ড অব অ্যাক্রেডিটেশন (এনবিএ)-এর স্বীকৃতি পেতে ব্যর্থ হয়েছে। অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (AICTE) নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক বিভাগে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১:১৫ থাকা আবশ্যক। কিন্তু সাতটি বিভাগের অনুপাত ১:২০। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অনুমোদিত ১৬টি পদের পরিবর্তে মাত্র ৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। ১৬০ জন ছাত্রের জন্য অনুপাত দাঁড়াচ্ছে ১:২৩, ফলে স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ নেই বলে সংশ্লিষ্ট অধ্যাপকরা জানিয়েছেন।

    তবে নিয়োগের আগে শিক্ষা দপ্তরের অনুমতি লাগবে কি না, সেই প্রশ্নে রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাস বলেন, “প্রথমে আমরা শূন্যপদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করব। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” রাজ্য সরকারের এপ্রিল ২০২৪-এর পরামর্শ অনুযায়ী, যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যনির্বাহী উপাচার্য রয়েছেন, তাদের শিক্ষা দপ্তরের অনুমতি ছাড়া স্থায়ী নিয়োগ করা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে সিইউ কীভাবে অগ্রসর হবে, সেদিকেই নজর শিক্ষামহলের।

    ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি একসময় 'প্রাচ্যের অক্সফোর্ড' নামে খ্যাত ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দ, এবং সুভাষচন্দ্র বসুর মতো মনীষীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে ঐতিহ্য ও গৌরবের ধারক এই প্রতিষ্ঠান আজ শিক্ষক সংকটে পড়ে এক গভীর সঙ্কটে। শিক্ষামহল মনে করছে, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে দ্রুত স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই।
  • Link to this news (আজকাল)