• কলকাতায় এক সঙ্গে দু’টি দুঃসাহসিক ব্যাঙ্ক প্রতারণার রহস্য উদ্ঘাটন পুলিশের, গ্রেফতার ছয়
    আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: নথি জাল করে প্রতারণার দু’টি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। একটি গাড়ি কেনার নাম করে ভুয়ো নথি দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ৫৫.৩৪ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ। অন্যটি, সরকারি কর্মচারী পরিচয় দিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ৬২ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ। গাড়ি কেনার নাম করে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনায় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে। চারজন ব্যক্তি কলকাতা ও কলকাতা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা। 

    পুলিশ জানিয়েছে, ঠাকুরপুকুর এলাকায় ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ২০২২ সালে গাড়ি কেনার নাম করে ঋণের আবেদন করেছিলেন কয়েকজন। পূর্বপরিকল্পিতভাবে তৈরি ভুয়ো কাগজপত্র ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছিলেন অভিযুক্তরা। এইসব নথি ব্যবহার করে অভিযুক্তরা চারটি গাড়ি ঋণের জন্য আবেদন করেন এবং ব্যাঙ্কের সঙ্গে লোন-কাম-হাইপোথিকেশন চুক্তি করেন। মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৫.৩৪ লক্ষ টাকা। ঋণ নেওয়ার পরেই ভুয়ো নথির ব্যাপারটি নজরে আসে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। ম্যানেজারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।

    পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তে ব্যাঙ্ক থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা হয় এবং অভিযোগকারীর বক্তব্য রেকর্ড করা হয়। পরবর্তীতে জানা যায় যে চারজন ঋণগ্রহীতার নামে জাল নথি ব্যবহার করে ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। এরপরেই চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মধ্যে অন্যতম কৌশিক ঘোষ। ৪৮ বছর বয়সী এই বেহালার বাসিন্দা চার জন ঋণগ্রহীতার নামে জাল কাগজপত্র প্রস্তুত করেন। এই ব্যক্তি অন্যদের সঙ্গে মিলে ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। দ্বিতীয় জন, সুজিত কুমার মিশ্র (৪১ বছর) কমিশনের বিনিময়ে ঋণগ্রহীতা যোগাড় করেন। তৃতীয় জন সুব্রত পুরকাইত (৩৮ বছর) নিজেই এক জন ঋণগ্রহীতা। যিনি নিজের নামে ভুয়ো কাগজপত্র ব্যবহার করে গাড়ি ঋণ গ্রহণ করেন। চতুর্থ ব্যক্তির নাম  রণব্রত চট্টোপাধ্যায় (৫১ বছর)।

    চার অভিযুক্তকে শুক্রবার আলিপুরের আদালতে পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানিয়ে পেশ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত এখনও চলছে। খুব শীঘ্রই চারটি গাড়িও বাজেয়াপ্ত করা হবে।

    অপরদিকে, পার্সোনাল লোনের নামে ৬২ লক্ষ টাকার প্রতারণার ঘটনায় দুই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

    পুলিশ সূত্রে খবর, ভুয়ো স্যালারি স্লিপ, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি জমা দিয়ে মোট ছ’টি পার্সোনাল লোনের আবেদন করা হয়েছিল। ঋণগ্রহীতারা নিজেদেরকে সেচ, স্বাস্থ্য, বনদপ্তরের মতো বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মী বলে মিথ্যা পরিচয় দিয়েছেলেন। প্রতারকরা এভাবে প্রায় ৬২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন।

    তদন্তকারী আধিকারিকরা প্রাসঙ্গিক নথিপত্র ও মৌখিক সাক্ষ্য সংগ্রহ করেন। তদন্তে জানা যায় যে একটি চক্র এই প্রতারণায় যুক্ত। চক্রটি মূলত বাঁকুড়া, বর্ধমান এলাকা থেকে অপারেশন চালাত এবং ব্যাঙ্ক দ্বারা নিযুক্ত কিছু এজেন্টের মাধ্যমে প্রতারণা করত।

    কলকাতা পুলিশে গোয়েন্দা শাখা তদন্তে নেমে এর আগে বাঁকুড়া সোনামুখি থেকে আকাশ ধীবর নামক এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। পরে আরও এক অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বৃহস্পতিবার বর্ধমান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ  নাম রানা বাল্মীকি (৩৭ বছর)।

    পুলিশ সূত্রে খবর,  এই ব্যক্তি ব্যাংকের একজন এজেন্ট। তিনি ভুয়ো নথি প্রস্তুত করতে সহায়তা করেন এবং প্রতারণার টাকার একটি বড় অংশ কমিশন হিসাবে গ্রহণ করেন। অভিযুক্তকে শুক্রবার আদালতে পেশ করে পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হয়েছে।
  • Link to this news (আজকাল)