• বাড়িতেই 'বোমা' তৈরির কারখানা, ছাত্রছাত্রীদের হাতে তা তুলে দিচ্ছেন শিক্ষক নিজেই, একের পর এক 'বোমা' ছোঁড়া হচ্ছে এলাকায়
    আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: সঙ্গীতশিক্ষার আড়ালে বাড়িতেই তৈরি হচ্ছে 'বোমা'। আর সেই 'বোমা' ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন শিক্ষক নিজেই। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে গানের শিক্ষকের বেনজির কীর্তিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। 

    অশোকনগরের মানিকতলা এলাকায় বাড়ি দেবজ্যোতি আচার্যের। পেশায় স্কুলশিক্ষক। সঙ্গীতশিক্ষক হিসেবেও এলাকায় তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তাঁর বাড়িতেই বোমা তৈরি হচ্ছে। শিক্ষকই ছাত্রছাত্রীদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তিনি ছাত্রছাত্রীদের হাতে সেই 'বোমা' তুলে দিচ্ছেন। গত দু'-তিন দিনে ওই ছাত্রছাত্রীরা এলাকায় প্রায় ৫০টি জায়গায় বোমা ছুঁড়েছেন। ওই শিক্ষক গর্বের সঙ্গে বলছেনও, তিনি নিজের হাতে ছাত্রছাত্রীদের হাতে 'বোমা' তুলে দিয়েছেন। তাঁর ছাত্রছাত্রীরা বুক ফুলিয়ে এলাকায় 'বোমা' ছোঁড়ার কথা স্বীকার করছেন।

    বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়াতেই সুলুকসন্ধান শুরু হয়। জানা গিয়েছে, ওই বোমা বারুদের তৈরি নয়। তৈরি হয়েছে মাটি দিয়ে। বোমার ভিতরে বারুদের পরিবর্তে রয়েছে গাছের বীজ। শিক্ষক দেবজ্যোতিবাবু ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বাড়িতেই ওই 'বীজবোমা' তৈরি করেছেন। বোমার ভিতরে আম-কাঁঠাল-সহ বিভিন্ন ফলের বীজ রয়েছে। তারপর তা ছাত্রছাত্রীদের হাতে তিনি তুলে দিয়েছেন। গত দু'-তিন দিনে দেবজ্যোতিবাবুর ছাত্রছাত্রীরা এলাকার বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় ৫০টির বেশি বীজবোমা ছুঁড়েছে।

    প্রসঙ্গত, পাঁচ বছর আগে বিধ্বংসী আমফান‌ ঘূর্ণিঝড়ে উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকার বহু গাছ ভেঙে গিয়েছে। বনদপ্তরের পক্ষ থেকে তারপর বিভিন্ন সরকারি জায়গায় গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে সে সব গাছের বেশিরভাগই মরে গিয়েছে। পাশাপাশি বসিরহাট, বাদুড়িয়া ও তেঁতুলিয়া এলাকায় অসংখ্য ইটভাটা গড়ে উঠেছে। ওই সব ইটভাটায় জ্বালানি সরবরাহের জন্য রাতের অন্ধকারে গাছ কাটা হচ্ছে। চোরাকারবারিরা রাস্তার পাশের সরকারি গাছ কেটে ইটভাটায় পাচার করে দিচ্ছে। সবুজ বাঁচাতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলন শুরু হয়েছে। হাবড়া ও  অশোকনগর-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও সবুজরক্ষার আন্দোলন চলছে। কিন্তু গাছকাটা বন্ধ করা যায়নি। 

    বিভিন্ন গণসংগঠন ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে তারপর থেকে বর্ষাকালে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক দেবজ্যোতিবাবুও অভিনব পদ্ধতিতে সবুজ রক্ষার আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমাদের তৈরি বোমা কারও জীবন কেড়ে নেয় না। বরং জীবন দেয়। বোমায় কোনও বারুদ নেই। আছে গাছের বীজ। ছাত্রছাত্রীরা চারপাশে বিভিন্ন জায়গায় ওই বোমা ছুড়েছে। চলতি বর্ষায় ওই বীজ থেকে নতুন চারা বেরোবে। গাছগুলো বড় হলে তা আমাদের অক্সিজেন দেবে। পৃথিবী আরও সবুজ হয়ে উঠবে।' 

    দেবজ্যোতিবাবুর ছাত্র গোপাল হালদার বলেন, 'আমি এলাকায় বেশ কয়েকটা জায়গায় বোমা ছুঁড়েছি। আমাদের বীজবোমা পরিবেশ রক্ষা করবে। নতুন চারাগাছ হবে। তা থেকে আমরা অক্সিজেন পাব। শিক্ষক দেবজ্যোতিবাবু সবুজ সৃষ্টিতে আমাদের নতুন পথ দেখিয়েছেন।' 

    সবুজ সৃষ্টিতে শিক্ষক দেবজ্যোতিবাবুর অভিনব উদ্যোগকে কুর্নিশ করেছেন ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরাও। বাসন্তী বিশ্বাস নামে এক অভিভাবক বলেন, 'আমাদের ছেলেমেয়েরা দেবজ্যোতিবাবুর কাছে গান শেখেন। গান শেখানোর পাশাপাশি তিনি অভিনব পদ্ধতিতে ছেলেমেয়েদের সবুজরক্ষার মন্ত্র শেখাচ্ছেন। শিক্ষকের উদ্যোগকে আমরা সম্মান জানাচ্ছি।'
  • Link to this news (আজকাল)