জয় বাংলা শুনে গাড়ি থেকে নেমে তেড়ে গিয়েছিলেন, সেই শুভেন্দুকে জয় বাংলার দাপট চেনাল কোচবিহার
আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ৩০ জুলাই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল শুভেন্দু অধিকারীর একটি ছোট্ট ভিডিও। স্থান, কাল পাত্র ভেদে, মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট যা ঘটেছে কোচবিহারে, অনেকেই বলছেন, এ যেন এক বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার ছবি। যে জয় বাংলা শুনে গাড়ি থেকে নেমে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তেড়েফুঁড়ে গিয়েছিলেন, কোচবিহারে প্রতিবাদ মিছিলে সেই তাঁকেই একপ্রকার নাস্তানাবুদ হতে দেখা গেল। বলতে শোনা গেল, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে এনে তাঁর মিছিলে হামলা চালানো হয়েছে। বুলেট প্রুফ গাড়ির কাঁচ নাকি রোহিঙ্গারাই ভেঙে ফেলেছে পাথর দিয়ে। আবার মিছিল-সঙ্গী নিশিথ প্রামাণিক বলছেন, তৃণমূলের উদয়ন গুহ পরিকল্পনা করেই এসব হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তৃণমূল আবার বলছে, নিজেরাই নিজেদের মিছিলে হামলা করে, দোষ দিচ্ছে তৃণমূলের ঘাড়ে। সূত্রের খবর, বিজেপির সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া রাজ্য সভাপতি বলছেন প্রতিবাদ মিছিলে হামলার প্রতিবাদে আবার মিছিল করবেন।
মঙ্গলবার শুভেন্দুর মিছিল ছিল কোচবিহারে। বিজেপি কর্মসূচি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূল জানিয়ে দেয়, একই দিনে, একই পথে ১৯টি সভা করবে তৃণমূল কংগ্রেস। শুভেন্দুর সফরের শুরুতেই বিভিন্ন স্থানে বহু মানুষ কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পরিস্থিতি চরমে ওঠে কিছুক্ষণেই। যখন খাগড়াবাড়ি এলাকায় শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি নেতা নিশীথ প্রামাণিকের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। কালো পতাকা দেখিয়ে, জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া হয় মিছিল ঘিরে।
বিজেপি সরাসরি আঙুল তুলছে তৃণমূলের দিকে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, ‘বাংলা ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অপমানজনক বক্তব্য তিনি রাখছেন, তার প্রতিবাদেই আমাদের এই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ।‘ ঘটনার খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার খাগড়াবাড়ি ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত বাহিনী। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পুরো বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, ৩০ জুলাই যে ভিডিও ভাইরাল হয়, অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস তাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে শেয়ার করে, তাতে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতার কনভয় পেরিয়ে যাচ্ছিল রাস্তা দিয়ে। তখনই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ জয় বাংলা স্লোগান দেন। আর তা শুনেই রীতিমতো কনভয় থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসেন শুভেন্দু। যেখানে অতি সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যেত, সেখানে নেমে আসা পর্যন্ত ধরে নেওয়া যাক সব ঠিক আছে। কিন্তু তারপর কী করে বসলেন তিনি? গাড়ি থেকে নেমে সাধারণ মানুষকে রীতিমতো জেরা করতে থাকেন, কেন জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছেন তাঁরা? গলা উঁচিয়ে, আঙুল উঁচিয়ে পালটা ‘জয় শ্রীরাম’ বলতেও শোনা যায় তাঁকে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের গলায় তখনও 'জয় বাংলা' স্লোগান। মুখ্যমন্ত্রীর নামে দু’ চার কথা বলতে বলতে চলেই যাচ্ছিলেন শুভেন্দু, আচমকা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া মানুষদের রোহিঙ্গা বলতে শোনা যায় স্পষ্টভাবে। ‘চামড়া তুলে দেব, আমাকে চেনে না…’ জাতীয় হুমকিও দিতে থাকেন সকলের সামনেই। শুভেন্দুর নির্দেশে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরাও কিছুটা দৌড়াদৌড়ি করেন।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই ভিডিও শেয়ার করা হলেও, মূলত এই ভিডিও উদ্বেগ বাড়িয়েছে সাধারণের মধ্যেও। কারণ খুব স্পষ্ট। সাম্প্রতিক সময়ে, যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বারবার অভিযোগ করছেন, দেশের নানা বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলা বললেই, বাংলাদেশি দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অকারণ হেনস্থা করা হচ্ছে, সেখানে যদি রাজ্যের মধ্যেই, বাংলায় দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতা দুটি বাংলা শব্দ শুনে এভাবে তেড়েফুঁড়ে যান সাধারণ মানুষের দিকে, তাহলে সুরক্ষা কোথায়? মঙ্গলবারে নিজের রাজ্যে বিক্ষোভের মুখে পড়ে, শুভেন্দু ফের বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে এলেন।