সেনায় যোগ দিয়ে প্রথমবার বাড়ি ফিরতেই চমকে উঠলেন এই তরুণী অফিসার
আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: গ্রামের মেয়ে যোগ দিয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। তাও আবার লেফটেন্যান্ট পদে। আনন্দে আত্মহারা বানারহাট ব্লকের আংড়াভাষা এলাকার সকলেই। যোগদানের পর বাড়ি ফিরে আসার পর গোটা গ্রাম উচ্ছাসের স্রোতে ভেসে গেল। ব্যান্ড বাজিয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা তাঁকে নিয়ে হেঁটে বাড়ি পৌঁছে দিলেন গ্রামবাসীরা।
জানা গিয়েছে, গ্রামের তরুণী সুপ্রিয়া মজুমদার ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সদ্য নার্সিং অফিসার পদে যোগ দিয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছে এই গ্রামে সুপ্রিয়াই প্রথম মহিলা যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। প্রতিবেশী ও বাকি সকলের এই উচ্ছাস দেখে প্রথমে এই তরুণী অফিসার কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও পরে তিনিও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। জানা গিয়েছে যোগদানের পর এই মুহূর্তে তরুণী এই অফিসারকে পাঠানো হয়েছে প্রয়াগরাজ মিলিটারি হাসপাতালে (এম এইচ)। কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার পর প্রথমবার ১০ দিনের ছুটিতে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। আর সেই খবর পেয়েই গ্রামবাসীরা তাঁকে এভাবে অভ্যর্থনা জানান। একটা সময় সেনাবাহিনীতে মহিলাদের উপস্থিতি কম থাকলেও বর্তমান সময়ে প্রচুর সংখ্যক মহিলা দেশ রক্ষার জন্য পুরুষদের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সমস্ত বিভাগেই যোগ দিচ্ছেন। যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবেও তাঁরা উঠে আসছেন। লেফটেন্যান্ট সুপ্রিয়া মজুমদার জানান, মহিলারা আজ আর পিছিয়ে নেই। নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকলে সমস্ত বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বাবা বিধানচন্দ্র মজুমদার ভারতীয় বায়ুসেনায় হাসিমারাতে কর্মরত। বাবাই তাঁকে সেনায় যোগ দিতে উৎসাহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন সুপ্রিয়া।
বিধানবাবু জানিয়েছেন, সেনায় যোগ দেওয়ার পর মেয়ে বাড়ি ফিরেছে সেজন্য গ্রামের সবাই আজ এভাবে আনন্দে বরণ করেছেন। নিজে সুপ্রিয়াও কৃতজ্ঞ চিত্তে গ্রামবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁর বাবা জানিয়েছেন, সুপ্রিয়াকে দেখে গ্রামের অন্যান্য মেয়েরাও সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে এগিয়ে আসবেন। প্রসঙ্গত, কয়েকমাস আগে 'অপারেশন সিঁদুর'-এর আবহে ভারতীয় সেনায় 'অগ্নিবীর' হিসেবে যোগদান করেন ময়নাগুড়ির সাতভেন্ডির তরুণ মনোরঞ্জন রায়। সেই সময় মনোরঞ্জনের স্বপ্ন পূরণে স্বাগত জানিয়ে তাঁকে ফুলের মালা পরিয়ে সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। মনোরঞ্জন বেঙ্গালুরুতে যোগদান করবেন এবং এরপর প্রশিক্ষণ নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। এলাকার বাসিন্দারা জানান, ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকা থেকে এইভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে এগিয়ে আসছেন তরুণ-তরুণীরা। তাঁরা যে ওই অঞ্চলের সকলকে গর্বিত করছে তা প্রমাণ করে এই সম্বর্ধনা।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে মহিলাদের যোগদান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা উচ্চপদে আসীন হচ্ছেন মহিলারা। তার উদাহরণ আমরা পেয়েছি অপারেশন সিঁদুরের সময়। অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর সময় বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ এবং কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। গুজরাটের মেয়ে সোফিয়া, বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর। সোফিয়ার ঠাকুরদা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। সোফিয়া বর্তমানে সেনাবাহিনীর যোগাযোগ ও তথ্য বিভাগের সিগন্যাল কর্পসের কর্নেল পদে রয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ছ’ বছর ধরে। ২০০৬ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা বাহিনীর হয়ে কঙ্গোয় কাজ করেছেন তিনি। চর্চায় উঠে আসেন ২০১৬ সালে। পুনেতে অনুষ্ঠিত হওয়া ১৮ দেশের সামরিক মহড়ায়, ভারতের হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন লেফ্টেন্যান্ট কর্নেল সোফিয়া।
অন্যদিকে, আইএএফ হেলিকপ্টার পাইলট উইং কমান্ডার ব্যোমিকার স্কুলজীবন থেকে আকাশের প্রতি টান অসম্ভব। সপ্ন দেখতেন আকাশে ওড়ার। ইংরেজিতে স্নাতক ব্যোমিকা, পরিবারের প্রথম, যিনি সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেন। তাঁর ২৫০০ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে উড়ান চালনা করার রেকর্ড রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তর-পূর্ব সহ ভারতের সবচেয়ে প্রতিকূল ভূখণ্ডে চেতক এবং চিতার মতো বিমান পরিচালনা করেছেন। ২০২০ সালের নভেম্বরে, তিনি অরুণাচল প্রদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্ব, কর্মদক্ষতা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বিস্তর। ২০২১ সালে ব্যোমিকা ২১,৬৫০ ফুট উঁচু হিমালয় শৃঙ্গ মাউন্ট মণিরং-এর ত্রি-সেনাবাহিনীর সর্ব-মহিলা অভিযানের অংশ ছিলেন।