বাংলায় এসআইআর কার্যকর করতে মরিয়া নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে অঘোষিত প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবারেই ২৯৩টি বিধানসভার ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে কমিশন। সেই তালিকা কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোডও করা হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের ২৪ জেলার এই ভোটার তালিকা অনুযায়ী শুরু হবে এসআইআর। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে এত দ্রুত এসআইআর কার্যকর করা নিয়ে রয়েছে একাধিক সংশয়। কারণ, এখানকার ভৌগোলিক অবস্থান, আঞ্চলিক চরিত্র এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপট ভোটার তালিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ বাস করে এখানে। অন্য রাজ্যের থেকে এখানকার জনবিন্যাসও ভিন্ন প্রকৃতির।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যে এসআইআর কার্যকর করা নিয়ে একটি সুপরিকল্পিত প্রশাসনিক প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। সেজন্য ভোটের মুখে বিহারে বিশেষ ও নিবিড় ভোটার তালিকা সমীক্ষা হলেও বাংলায় এখনই তা কার্যকর করা নিয়ে আপত্তি জানাল রাজ্য সরকার। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কমপক্ষে দুই বছর সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে নবান্ন। শুক্রবার এই মর্মে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে রাজ্য। এমনটাই সূত্রের খবর। সেই চিঠিতে রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, এসআইআর-এর জন্য রাজ্য এখনই প্রস্তুত নয়। এভাবে ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় পরিমার্জন করা যায় না বলে রাজ্য অভিমত প্রকাশ করেছে।
তবে এসআইআর নিয়ে রাজ্যের এই অবস্থানকে বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করেছে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের শাসকদলকে আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এবং দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, সবটাই বোঝা যাচ্ছে। এরা যেনতেন প্রকারেণ এসআইআর আটকাতে মরিয়া। কারণ, ভোটার তালিকার নিবিড় পরিমার্জন হলে রোহিঙ্গাদের ভোটে জেতা এই সরকার মুখ থুবড়ে পড়বে। তবে কমিশন দেশের সার্বভৌমত্বকে বাঁচানোর জন্য অবশ্যই পদক্ষেপ করবে। আর এসআইআর ছাড়া বিজেপিও বাংলায় নির্বাচনে যেতে নারাজ।
এসআইআর প্রসঙ্গে বিজেপির এই আক্রমণের পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা ভোট চুরির অভিযোগ তুলেছে রাজ্যের শাসকদল। তুলে ধরা হয় রাহুল গান্ধীর অভিযোগের প্রসঙ্গও। তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী দাবি করেন, এসআইআর নিয়ে প্রহসন চলছে। রাহুল গান্ধী তো তথ্য তুলে ধরে ভোট চুরি দেখিয়ে দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন আগে সেই অভিযোগের জবাব দিক।
কয়েকদিন আগেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক বা সিইও কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, এসআইআর-এর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত বাংলা। কিন্তু মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সেই চিঠিকেই খারিজ করতে মরিয়া রাজ্য। এজন্য রাজ্যের মুখ্য সচিব এখনই রাজ্যে এসআইআর নিয়ে আপত্তি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিইও দপ্তরে তড়িঘড়ি একটি চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেন। চিঠিতে এতো দ্রুত এসআইআর কার্যকর করা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্য সচিব। চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কেন রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে সিইও দপ্তর কমিশনকে চিঠি পাঠালো?
প্রসঙ্গত, বিহারের পরিমার্জন পর্ব মেটার খানিক পর থেকেই এসআইআর নিয়ে নবান্নের সঙ্গে কমিশনের সংঘাত যেন বেড়েই চলেছে। হঠাৎ করে মুখ্যসচিবের কাছে চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, রাজ্যের সিইও দপ্তরকে স্বতন্ত্র করতে হবে। অর্থাৎ রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর ‘স্বাধীন’ হতে চায়। সেই থেকে সংঘাতের সূত্রপাত। সেই সংঘাতের সঙ্গে নতুন সংযোজন বাংলার আধিকারিকদের নিলম্বিত করার নির্দেশ। কমিশনের সেই নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে তাঁদের সামনে ‘ত্রাতা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সেই সংঘাতের সঙ্গে জুড়ে গেল এসআইআর কার্যকর করা নিয়ে রাজ্যের বর্তমান অবস্থান। এখন দেখার, কমিশন ও রাজ্যের এই সাপলুডোর খেলায় শেষ অবধি কার জিত হয়।