প্রকল্প রূপায়ণে গ্রামবাসীর দক্ষতা দেখে তাজ্জব প্রশাসনের কর্তারা, কৃষ্ণনগরে আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান কর্মসূচি
বর্তমান | ০৮ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: নিজের এলাকার উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। কোন জায়গায় কতটা কাজ প্রয়োজন কিংবা কোথায় কোন কাজটা হলে উন্নয়ন পূর্ণতা লাভ করবে, তা যেন নখদর্পণে তাঁদের। ‘আমাদের পাড়া আমাদের সামাধান’ কর্মসূচির আলোচনা সভায় প্রশাসনের আধিকারিকদের সামনে পেয়ে পরিকল্পনা ও তার রূপায়ণের পুরো ছবিটাই এঁকে দিচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারা। দরকার পড়ছে না জনপ্রতিনিধিদের। উন্নয়নের ব্যাপারে সেই সমস্ত ‘এক্সপার্ট’ বাসিন্দাদের কথা শুনে অবাক প্রশাসনের কর্তারাও। তাঁদের মতে, সাধারণ মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, এলাকার উন্নয়নের ব্যাপারে তাঁরা কতটা ওয়াকিবহাল। যার জন্যই নদীয়া জেলায় মাত্র চারদিনেই এক লক্ষ মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। জমা পড়েছে প্রায় তিন হাজার প্রকল্প।
নদীয়া জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন ব্লকে আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান কর্মসূচি হচ্ছে। সেখানে প্রশাসনের আধিকারিকরাও থাকছেন। মানুষ তাঁদের এলাকার নানা সমস্যার কথা তুলে ধরছেন। ভালো সাড়া মিলছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি গত ২ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্যই হল, সাধারণ মানুষই ঠিক করবে তাদের এলাকার কোন কাজটি আগে প্রয়োজন। প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় স্থানীয়রাই সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রকল্প নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা খর্ব করেছে রাজ্য সরকার। এমনকী প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজও করবে ব্লক প্রশাসন। নদীয়া জেলায় আলোচনা সভাগুলোতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি দেখে আপ্লুত প্রশাসনের আধিকারিকরাও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৬ আগস্ট পর্যন্ত মোট শিবির হয়েছে ১৫৪টি। যেখানে এসেছেন ৯৮ হাজার ৩৮৪ জন মানুষ। করিমপুর-১, করিমপুর-২, নবদ্বীপ পুরসভা কৃষ্ণনগর-২ এই কর্মসূচিতে প্রতি বুথ থেকে গড়ে ৩০০ জনের বেশি মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট ২৯৫৬টি প্রকল্প জমা পড়েছে। যার মধ্যে ৩১.৮ শতাংশ পথবাতি, ২৯.৪ শতাংশ রাস্তা, ১৪.৪ শতাংশ ড্রেনে তৈরির প্রকল্প জমা পড়েছে। বীরনগর পুরসভা, কৃষ্ণগঞ্জ, তেহট্ট-২ এবং চাকদহ ব্লকে প্রতি বুথ থেকে গড়ে ১৪ থেকে ১৫টি প্রকল্প জমা পড়েছে।
নদীয়া জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অনুপকুমার দত্ত বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় শিবিরে গিয়ে দেখেছি, সাধারণ মানুষের মধ্যে নিজের এলাকার উন্নয়ন নিয়ে সার্বিক চিন্তাভাবনা রয়েছে। যেটা আমাদেরও উৎসাহিত করেছে। গ্রামের মানুষ বিভিন্ন দিক ভেবে উন্নয়নের পরিকল্পনা তুলে ধরছেন।
সম্প্রতি হাঁসখালি ব্লকের রামনগর-১ পঞ্চায়েতের উমরপুর হাই স্কুলে শিবির করা হয়। সেখানে জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসকের মতো জেলার শীর্ষ আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে গ্রামবাসীরা কোথায় রাস্তার প্রয়োজন নেই, কিন্তু পাশে একটা ড্রেন রয়েছে, সেটিকে যদি স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে দেওয়া যায় তাহলে রাস্তাটি অনেক চওড়া হবে। আবার কোথাও বৃষ্টি হলে রাস্তায় জল জমে যায়। তাই রাস্তাটি যদি উঁচু করে সামান্য ঢাল করে দেওয়া যায়, তাহলে জল বেরিয়ে যাবে। উন্নয়নের এরকম অতি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়গুলো আলোচনা সভায় তুলে ধরছেন এলাকাবাসীরা। প্রশাসনের আধিকারিকদের মতে, সারা বছর গ্রাম পঞ্চায়েত পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা জেলা পরিষদ উন্নয়নমূলক কাজে অনেক বড় বড় প্রকল্প ধরে। যেখানে অতি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়গুলো বাদ পড়ে যায়। কৃষ্ণনগরে আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান।