সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: বৃহস্পতিবার ভোরে ভাগীরথীর জলে নবদ্বীপ ব্লকের মহিশুড়া পঞ্চায়েতের একাংশ প্লাবিত হল। নদী-তীরবর্তী দক্ষিণপাড়া, মাঠপাড়া ও উত্তরপাড়ার একটা অংশ বানভাসি হওয়ায় প্রায় ৫০টি পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়ে। তার মধ্যে কিছু পরিবার স্থানীয় আইসিডিএস কেন্দ্র ও পঞ্চায়েতের তৈরি ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। বাকিরা জলমগ্ন এলাকাতেই রয়ে গিয়েছে। প্লাবনের জেরে স্থানীয় কৃষকরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এবিষয়ে কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা শাসক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, প্লাবিত এলাকার মানুষকে বিভিন্ন ফ্লাড শেল্টার ও স্কুলে সরিয়ে আনা হচ্ছে। দুর্গতদের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
মহিশুড়ার উপপ্রধান আকমল সরদার জানিয়েছেন, ভাগীরথীর জল ঢুকে পড়ায় এই পঞ্চায়েতের ২২৬নম্বর বুথে গদখালি মৌজার প্রায় ৫০টি পরিবার সমস্যায় পড়েছে। এমনিতেই একনাগাড়ে বৃষ্টির জেরে নিচু জায়গায় জল জমেছিল। এরপর ভাগীরথীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় ভোর থেকেই দক্ষিণপাড়া, মাঠপাড়া ও উত্তরপাড়ার কিছু এলাকায় মাঠে জল ঢুকে যায়। দক্ষিণপাড়ার কৃষিজমি হয়ে চারমাথা কালভার্টের মাধ্যমে কালীনগর সদগোপপাড়ার পাশ দিয়ে সেই জল ফের ভাগীরথীতে গিয়ে পড়ছে। ৫০টি বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। তার মধ্যে কিছু পরিবার বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছে। বাকিরা স্থানীয় আইসিডিএস কেন্দ্র ও পঞ্চায়েতের দু’টি ঘরে এসে উঠেছে। এলাকার প্রায় ২০০বিঘা কৃষিজমি জলমগ্ন। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই দিনমজুর। তাঁরা বন্যা পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েছেন। পঞ্চায়েতের তরফে সমস্যার কথা বিডিওকে জানানো হয়েছে।
মহিশুড়ার মধ্যপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা জুলু শেখ বলেন, ১০হাজার টাকা খরচ করে প্রায় এক বিঘা জমিতে আখ লাগিয়েছিলাম। অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। অপর কৃষক মনিরুল সরদার বলেন, আমার দু’বিঘা জমির ভুট্টা জলের তলায়। এই এলাকায় ২০০-২৫০ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের আবেদন জানাই।
দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা রায়না বিবি, শরিফা বিবি বলেন, আমাদের এলাকা খুবই নিচু। এলাকায় জল ঢুকে পড়ায় অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। স্থানীয় বধূ মৌসুমী বিবি বলেন, বুধবার রাতে বাড়িতে জল ঢুকে পড়েছে। বাড়িতে এখন এক কোমর জল। স্বামী, ছেলেমেয়ে, শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে আইসিডিএস কেন্দ্রে এসে উঠেছি। মাঠপাড়ার বাসিন্দা নুরজাহান বিবি বলেন, ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে আমি থাকি। জল আরও বাড়লে কোথায় যাব জানি না।
সেচদপ্তর জানিয়েছে, ভাগীরথী নদীর জলের বিপদসীমা ৮.৪৪মিটার। চরম বিপদসীমা ৯.০৫মিটার। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো পর্যন্ত ভাগীরথীর জল ৮.৮৮মিটার ছুঁয়েছে। তিলপাড়া ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ায় জলস্তর আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।