• গঙ্গায় রক্ষে নেই, দোসর ফুলহার বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেল নদীর জলস্তর
    বর্তমান | ০৮ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, মানিকচক: চরম বিপদসীমা থেকে মাত্র ২ সেন্টিমিটার নীচে গঙ্গার জল। অন্যদিকে নতুন করে জলস্তর বেড়ে বিপদসীমা ছাড়াল ফুলহার নদী। ভূতনির কালুটোনটোলায় রাতের অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে বাড়ি সহ সামগ্রী। তবে, অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন শিবকুমার চৌধুরী ও তাঁর পরিবার। জলমগ্ন হয়েছে মানিকচকের নতুন বেশকিছু এলাকা। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় ব্যাপক আতঙ্কে রয়েছেন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।

    মালদহ জেলাজুড়ে লাগাতার বৃষ্টির জেরে গঙ্গার জলস্তর বাড়ছে। গত তিন দিনে একেবারে চরম বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে গঙ্গা। বৃহস্পতিবার গঙ্গার জলস্তর ছিল ২৫.২৮ মিটার, যা চরম বিপদসীমা থেকে মাত্র ২ সেন্টিমিটার নীচে রয়েছে। গঙ্গার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার বিপদসীমা ছাড়াল ফুলহারও। বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে ফুলহার। বৃহস্পতিবার জলস্তর ছিল ২৭.৫৭ মিটার। এই জলস্তর বৃদ্ধির কারণে মথুরাপুরের উৎসবটোলার অসংরক্ষিত এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। অন্যদিকে, গঙ্গার জলস্তর বৃদ্ধিতে মানিকচক ঘাট সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী ও নারায়ণপুর চরের বাসিন্দারা বাঁধের উপরে আশ্রয় নিয়েছেন। ঠিক একইভাবে ভূতনির কালুটোনটোলা, বসন্তটোলা এলাকায় ব্যাপক ভাঙনে বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ায় বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে শতাধিক পরিবার। এখনও বেশকিছু পরিবার সেই এলাকায় বাড়ি ভাঙছেন। তার মধ্যেই অল্পের জন্য গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচল গোটা পরিবার। 

    গঙ্গার জল বৃদ্ধিতে বাড়ি ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন শিবকুমার চৌধুরী। বেশকিছু জিনিস বাঁধে নিয়ে গেলেও কিছু বাড়িতে থেকে যায়। বুধবার রাতে সেজন্য বিপদ মাথায় নিয়ে বাড়িতেই ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি ও পরিবারের সদস্যরা। হঠাৎই গভীর রাতে বাড়ির একাংশ দুলতে দেখে তড়িঘড়ি বেরিয়ে দেখেন একটি ঘরের একাংশ ভেঙে পড়েছে। তৎক্ষণাৎ বাড়ির অন্য সদস্যদের নিয়ে কোনওরকমে বেরিয়ে আসেন। চোখের সামনে নিমেষে গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে যায় বাড়ি। এবিষয়ে শিবকুমার বলেন, বাড়িতে থাকা বিছানা সহ সমস্ত খাদ্যসামগ্রী গঙ্গায় চলে গিয়েছে। শুধুমাত্র আমরা প্রাণে বেঁচেছি। যদি বাড়ি থেকে না বের হতাম, তাহলে আমরা সকলেই মারা যেতাম। আমার পাশাপাশি আরও কয়েকটি বাড়ি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে।

    এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে মানিকচক ও রতুয়ার ভাঙন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসেন রাজ্যের সেচ ও জলপথ দপ্তরের সচিব সঞ্জয় কুণ্ডু। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সেচদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার গৌরচাঁদ দত্ত, সুপারিনন্টেডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ ভট্টাচার্য, মালদহ জেলা সেচদপ্তরের আধিকারিক শিবনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, মানিকচকের বিডিও অনুপ চক্রবর্তী সহ অন্যরা। এদিন তাঁরা গোপালপুরের কামালতিপুর, ভূতনি ও রতুয়ার পশ্চিম রতনপুর, শ্রীকান্তটোলা, মুলীরামটোলা এলাকা পরিদর্শন করেন। সেচদপ্তরের পক্ষ থেকে ভাঙন কবলিত এলাকায় কী কাজ করা হয়েছে, সেসব খতিয়ে দেখা হয়। এবিষয়ে শিবনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, সেচমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙন ও কাজের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করে মন্ত্রীকে জানাব। তারপর ঊর্ধ্বতনও কর্তৃপক্ষ যেভাবে নির্দেশ দেবে, সেভাবেই কাজ করা হবে।  এগিয়ে আসছে নদী। বাড়ি ভেঙে সামগ্রী সরাচ্ছেন গ্রামবাসী। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)