‘জেলে থাকব, কিন্তু বাংলাদেশে ফিরব না’, প্রাণভয়ে কাতর আর্জি অনুপ্রবেশকারী জীবনের
বর্তমান | ০৮ আগস্ট ২০২৫
তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুর সঙ্গে অ্যাকাউন্ট খুলে নিজের দেশের সাম্প্রদায়িক বিষয় নিয়ে পোস্ট করেছিলেন রংপুরের বাসিন্দা জীবন রায়। এর ক’দিন পর থেকেই আর খোঁজ নেই তাঁর বন্ধুর। প্রাণ বাঁচাতে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে ডাম্পারের চেসিসে বসে এপারে এসেছিলেন জীবন। পুলিসের জেরায় তাঁর সাফ কথা, ভারতে জেলে থাকব, কিন্তু বাংলাদেশে আর ফিরব না।
পুলিসি জেরায় তিনি জানিয়েছেন, রংপুর থেকে পালিয়ে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে এসে সুযোগ খুঁজছিলেন বাংলাদেশ থেকে ভারতে কীভাবে যাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত ভুটান নম্বরের গাড়ির নীচে আশ্রয় নিয়ে কোনওমতে এপারে ফুলবাড়ি চলে আসেন। তবে জেরায় পুলিসের কাছে হাত জোড় করে জানিয়েছেন, ভারতের জেলে আজীবন থাকতে রাজি। কিন্তু ওপারে আর যাবেন না। যদিও পুলিস তাঁকে জানিয়েছে, অবৈধভাবে এদেশে যাঁরা আসেন, তাঁদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হয়।
তদন্তকারী এক অফিসার জানিয়েছেন, এপারে এসে ছেলেটি গল্প ফেঁদেছে কি না, সত্যতা যাচাই করা কঠিন। বাংলাদেশি ওই যুবক জীবনকে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে জেলে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ আইন অনুসারেই হবে।
শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিসের ডিসিপি (পূর্ব) রাকেশ সিং বলেন, এপারে এসে পুলিসের হাতে ধরা পড়ে অনেকেই অনেক গল্প বলেন। তার সত্যতা আমাদের পক্ষে যাচাই করা প্রায় অসম্ভব। আইন মোতাবেক কাজ করব।
তদন্তকারী অফিসারদের সূত্রে জানা গিয়েছে, জীবন এবং তাঁর এক বন্ধু সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে বাংলাদেশে ধর্মীয় কোনও পোস্ট করেছিলেন। সেই পোস্ট করার পর একাধিক জায়গা থেকে নানা ধরনের হুমকি তাঁদের ফোনে আসতে থাকে। কিছুদিন পর আচমকা জীবনের বন্ধু নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তাঁর কোনও খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। এরপরই ভয় পেয়ে যান জীবন। রংপুর থেকে পঞ্চগড় হয়ে বাংলাদেশের ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা সীমান্তে বুধবারই পৌঁছন তিনি। ভারতে ঢোকার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন। কাঁটাতারের বেড়ার দিকেও যান। কিন্তু দূর থেকে বিএসএফের প্রহরা দেখে আর সাহস পাননি। অনেক ভেবেচিন্তে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে বোল্ডার দিয়ে ফেরা ডাম্পারের চেসিসে বসে ভারতে ঢুকবেন বলে স্থির করেন। আর সুযোগ বুঝে একটি ডাম্পারের নীচে সকলের অলক্ষ্যে ঢুকে যান। এরপর কষ্ট করে প্রায় পাঁচশো মিটার চেসিসে বসেই ভারতে চলে আসেন জীবন। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। ফুলবাড়িতে ডাম্পার আসতেই তল্লাশি চালালে বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছেন। পরে তাঁকে পুলিসের হাতে তুলে দেয় বিএসএফ। জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের নির্দেশে বর্তমানে তিনি জেলে রয়েছেন।
তবে, তদন্তকারীদের তিনি জানিয়েছেন, ওপারে নিজের দেশে আর তিনি যাবেন না। কারণ সেখানে তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের খবর শিরোনামে এসেছে। পরবর্তীতে অনেকে এপারে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিএসএফ এবং পুলিস তাঁদের রুখে দেয়।