মালদহের পরিযায়ী শ্রমিককে রাজস্থান থেকে বাংলাদেশে পাঠানোর অভিযোগ, হাইকোর্টের দ্বারস্থ পরিবার
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৮ আগস্ট ২০২৫
রাজস্থানে কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দা আমির শেখ। পরিবারের অভিযোগ ছিল, তাঁকে বাংলাদেশি নাগরিক সন্দেহে বেআইনিভাবে আটক করে প্রতিবেশী দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে রাজস্থান পুলিশ। সেই ঘটনায় এবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন আমিরের বাবা জিয়েম শেখ। হেবিয়াস কর্পাস মামলা দায়ের করে ছেলেকে খুঁজে আনার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামের এই ঘটনা নিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন। সেখানে সামিরুল লেখেন, ‘আমির শেখ কোনওভাবেই রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশের নাগরিক নন। তিনি মালদহের কালিয়াচকের স্থায়ী বাসিন্দা। তাঁর পরিবারের নামে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ের জমির নথি রয়েছে। তা সত্ত্বেও বিজেপিশাসিত রাজস্থানের সরকার বেআইনিভাবে তাঁকে আটক করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।’
সামিরুলের আরও অভিযোগ, বিষয়টি সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল এবং এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে এমন আচরণ কোনও সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং আমিরকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।’
আমির শেখেরই করা একটি ভাইরাল ভিডিও থেকে গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। মাস তিনেক আগে জীবিকার সন্ধানে মালদহ থেকে রাজস্থানে পাড়ি দেন কালিয়াচকের যুবক আমির শেখ। অভিযোগ, সেখানে বাংলাদেশের নাগরিক তকমা দিয়ে দু’মাস জেলে আটকে রাখা হয়। কিছুদিন আগে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কালিয়াচকের যুবককে। ভাইরাল ভিডিও দেখে ঘটনার কথা জানতে পারে তাঁর পরিবার।
অভিযোগকারী আমির শেখ সেই ভিডিওতে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশি বলে আমাকে ২-৩ দিন রাখল থানাতে। রেখে আমাকে জেলে পাঠিয়ে দিল। জেলে আমাকে দু’মাস রেখেছিল। দু’মাস রাখার পর হাতে লকআপ দিয়ে আমাকে এখন এখানে নিয়ে এল। রাতে আমাকে পার করে দিয়েছে। আমার বাড়ি জালালপুর, জেলা হচ্ছে মালদহ, কালিয়াচক হচ্ছে থানা।’
ওই পরিযায়ী শ্রমিকের কাকা আজমল শেখের দাবি, ‘৪০০ বছর ধরে এখানে থাকি। আমাদের বাড়ির দলিলপত্র সবই আছে। আমার ভাইপো রাজস্থানে কাজে গিয়েছিল, তাঁকে বাংলাদেশি বলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাঙালির উপর এভাবে অত্যাচার করছে। বাঙালি হওয়া কি অপরাধ?’
এর আগে, গত জুলাই মাসে ওড়িশায় বাংলা সহ অন্যান্য রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের আটকের ঘটনায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময়ও কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। ওড়িশা সরকার দাবি করেছিল, তাঁরা কাউকে গ্রেপ্তার করেনি, বরং নাগরিকত্ব যাচাই করতে আটকে রেখেছিল মাত্র। বিচারপতি চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ সেই মামলায় রাজ্য সরকারকে চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে নির্দেশ দেয়। ওই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৮ আগস্ট।
এরই মধ্যে আরও এক পরিযায়ী শ্রমিকের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এবং তাঁকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা ফের প্রশ্ন তুলল পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে। আদালত এই মামলায় কী রায় দেয়, সেদিকেই এখন নজর আমিরের পরিবার সহ গোটা রাজ্যের।