• বন্যার্তদের খাবার জোগাতে হন্যে পুলিশ
    এই সময় | ০৭ আগস্ট ২০২৫
  • দিব্যেন্দু সরকার, আরামবাগ

    সারা বছর চুরি, ডাকাতি, খুন ও রাজনৈতিক সংঘর্ষ থামাতে প্রাণপাত করতে হয় ওঁদেরকে। সেই কাজ ভুলে আপাতত তাঁদের একটাই ধ্যানজ্ঞান-কী ভাবে বন্যার্তদের মুখে দু'বেলা খাবার তুলে দেবেন। তার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে উর্দিধারীদের।

    একটানা বৃষ্টি এবং নদীর কূল ছাপানো জলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জলমগ্ন আরামবাগের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠছে। বানভাসি মানুষদের কথা ভেবেই আরামবাগের মায়াপুরের হুগলি গ্রামীণ পুলিশের তরফে কমিউনিটি কিচেন চালু করা হয়েছে।

    সেখান থেকে আশপাশের বন্যা কবলিত এলাকার মানুষকে দু'বেলা খাবারের জোগান দিচ্ছে আরামবাগ থানার পুলিশ। তার তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন আরামবাগের আইসি রাকেশ সিং এবং আরামবাগের এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী। পুলিশের এই মানবিক মুখ দেখে ধন্য ধন্য করছেন অনেকেই।

    পুলিশ সূত্রের খবর, হুগলি গ্রামীণ পুলিশের এসপি কামনাশীষ সেনের নির্দেশেই এই কমিউনিটি কিচেন খোলা হয়েছে। যতদিন না জল নামছে, ততদিন এই কমিউনিটি কিচেন চালু থাকবে। পুলিশের এই উদ্যোগ হাজার হাজার বন্যা কবলিত মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। গত মঙ্গলবার কামারপুকুর যাওয়ার পথে পুলিশের ওই কমিউনিটি কিচেন দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    সেখানে যাওয়ার পর তিনি নিজের হাতে বন্যা দুর্গতদের খাবার পরিবেশন করেন। কেন লী গ্রামীণ সেই ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মুখ্যমন্ত্রী সেখানে যাওয়ার পরে কমিউনিটি কিচেন নিয়ে পুলিশের উৎসাহ আরও বেড়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও পুলিশের এই কাজের প্রশংসা করেছেন।

    বৃদ্ধা শীলা মণ্ডল চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন, 'আমি একা। আমার বাড়িতে কেউ নেই। পুলিশকর্মীরা যে ভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গিয়েছে। আমার আর নিজেকে একা মনে হচ্ছে না। আমার এত পুলিশ ব্যাটা থাকতে আর ভয় কী।'

    আরামবাগের এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, 'দেখুন, এটাকে আমি মোটেও সরকারি কাজ বলে মনে করছি না। বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোটা আমার নৈতিক কর্তব্য। মায়াপুরের এই কমিউনিটি কিচেন আজ প্রমাণ করে দিয়েছে, পুলিশ শুধু আইনের রক্ষক নয়, প্রয়োজনে তাঁরা হয়ে ওঠেন মানুষের আপনজন।'

    আরামবাগের মায়াপুরে পুলিশের কমিউনিটি কিচেনে এখন রোজ গড়ে প্রায় তিনশো জনের রান্না হচ্ছে। প্রত্যেককে বসিয়ে পাত পেড়ে খাওয়ানো হয়। খিচুড়ির পাশাপাশি ভাত ও তরিতরকারিও রান্না হয়। পুলিশ কর্মীরাই রান্না করেন। তাঁরাই নিজের হাতে পরিবেশন করেন। যাঁদের ঘরবাড়ি ডুবে গিয়েছে, তাঁদের থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আরামবাগের হরিণখোলা ক্যাম্প থেকেও দুর্গত মানুষদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্রতী হয়েছেন পুলিশ কর্মীরা।

    এই ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, 'আমরা শুধু বন্যা প্লাবিত এলাকার মানুষকে খাবারই জোগাচ্ছি না, বিপদের সময় তাঁদের পাশে থেকে মানসিক ভরসা দিচ্ছি। পুলিশ যে জনগণের বন্ধু, সেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।'

  • Link to this news (এই সময়)