• দামোদর সংস্কার হওয়ায় বন্যামুক্ত উদয়নারায়ণপুর
    এই সময় | ০৭ আগস্ট ২০২৫
  • মহম্মদ মহসিন, উদয়নারায়ণপুর

    বর্ষা এলেই বন্যা হবে। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ব্লকের মানুষের কাছে এতদিন এটাই ছিল দস্তুর! তার জন্য এখানকার মানুষ আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতেন। প্রায় প্রত্যেক বছরই নিয়ম করে ডিভিসি’র ছাড়া জলে প্লাবিত হয় উদয়নারায়ণপুর এবং আমতার বিস্তীর্ণ এলাকা। গত বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

    গতবার উদয়নারায়ণপুরের একাধিক জায়গায় দামোদরের বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছিল গ্রামে। তার জেরে কয়েক হাজার হেক্টর চাষের জমি প্লাবিত হয়েছি‍ল। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল বহু ঘরবাড়ি। অনেক কাঠের সেতু ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু এ বার ছবিটা অন্য বছরের তুলনায় একটু আলাদা। পাশেই হুগলির খানাকুল ও আরামবাগ যখন জলে ভাসছে, তখন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ও আমতায় তার বিন্দুমাত্র আঁচ পড়েনি।

    কিন্তু এর পিছনে আসল রহস্যটা কী? সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় নিম্ন–দামোদরের আমূল সংস্কার হয়েছে। নদী বাঁধের উচ্চতাও বেড়েছে। তার ফলে দামোদরের জলধারণ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। হুগলির তুলনায় হাওড়ার দিকে এই কাজটা আরও ভালো হয়েছে। সেই কারণেই এ বার উদয়নারায়ণপুর ও আমতায় এখনও পর্যন্ত বন্যা হয়নি।

    বর্ষাকালে ডিভিসি’র জলাধার থেকে যে জল ছাড়া হয়, সেটা পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বেগুয়াহা‍র কাছে এসে দু’–ভাগে ভাগ হয়ে যায়। কিছুটা অংশ মুণ্ডেশ্বরী হয়ে হুগলি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। বাকি অংশটা নিম্ন দামোদর হয়ে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা, বাগনান ও শ্যামপুরের উপর দিয়ে হুগলি নদীতে গিয়ে মিশেছে।

    মূলত ডিভিসি’র ছাড়া জলেই বছরের পর বছর প্লাবিত হতো উদয়নারায়ণপুর ও আমতা। এ বার সেটা না ঘটায় কিছুটা হলেও অবাক হচ্ছেন উদয়নারায়ণপুরের মানুষ। সেচ দপ্তরের এক আধিকারিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগে ডিভিসি’র জলাধার থেকে ৭০ হাজার থেকে এক লক্ষ কিউসেক জল ছাড়লেই উদয়নারায়ণপুরে বন্যা হতো, এখন দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়লেও সেটা ধারণ করার ক্ষমতা দামোদরের রয়েছে। দামোদরের সঙ্গে সংযোগকারী খালগুলিরও সংস্কার করা হয়েছে। তার জন্যই বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন উদয়নারায়ণপুরের মানুষ।

    আমতা ও উদয়নারায়ণপুরে বন্যা ঠেকাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কয়েক বছর আগে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয়। বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় প্রায় ২৯০০ কোটি টাকা খরচ করে হাওড়া, হুগলি, বর্ধমানের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দামোদর নদের পলি তোলার পাশাপাশি অনেক জায়গায় কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

    সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, তারই সুফল মিলতে শুরু করেছে এ বছর থেকে। উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘বর্ষা এলেই উদয়নারায়ণপুরে বন্যা হবে, এটা একটা নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে উদয়নারায়ণপুরবাসীকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন তারই সুফল মিলছে। এর জন্য উদয়নারায়ণপুরের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।’

    উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্যাণ গায়েন ও সহকারী সভাপতি লক্ষীকান্ত দাস বলেন, ‘রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আমরা নদীর সঙ্গে সংযোগরক্ষাকারী খালগুলির ব্যাপক সংস্কার করেছি। এর ফলে নদীর জল সহজেই বেরিয়ে যাচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)