নিজেদের কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্যকে তার নিজের তৈরি বিধি মানতে হবে। ডিএ মামলার শুনানিতে স্পষ্ট জানাল সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যের আইনজীবী শ্যাম দিওয়ান বৃহস্পতিবার আদালতে বলেন, ‘বিষয়টি সাংবিধানিক। রাজ্য সরকার তার অধিকার বলে সরকারি কর্মীদের চাকরির শর্ত তৈরি করবে। এটাই মৌলিক প্রিন্সিপাল। রাজ্য সরকার ডিএ দিচ্ছে না, এমন অভিযোগ মিথ্যা। এই ধারণা রাখাও উচিত নয়।’ তা শুনে বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্র বলেন, ‘আমরা কোনও ধারণা তৈরি করিনি। আপনি বলেছিলেন রোপার ভিত্তিতে ডিএ দেওয়া হবে। আপনিই বলেছিলেন বকেয়া ডিএ-ও দেওয়া হবে। আপনাকে রুল মানতে হবে।’
বৃহস্পতিবারও ডিএ মামলার শুনানি হয় সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে। মামলার শুরুতেই প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য। কোনও সুনির্দিষ্ট নীতি ছাড়াই রাজ্য সরকার তাদের খেয়াল খুশি মতো ডিএ দিচ্ছে, আদালতে অভিযোগ করেন সরকারি কর্মীদের তরফে সওয়াল করা আইনজীবী রউফ রহিম।
বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের পর্যবেক্ষণ, ‘কর্মীদের আর্থিক অবস্থার কথা ভাবতে হবে৷ রাজ্য সরকার বিভ্রান্তি তৈরি করে তার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এরা নিজেরাই সমস্যা তৈরি করেছে, সেই সমস্যার সুবিধে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।’ ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি সঞ্জয় কারোল বলেন, ‘মাথায় রাখতে হবে এটা কোনও আর্থিক ইমার্জেন্সি নয়৷’
সরকারি কর্মীদের আইনজীবী করুণা নন্দী সওয়াল করেন, ‘অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (AICPI) অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। লেবার ব্যুরো তা তৈরি করেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্মীদের জন্য আলাদা কোনও সূচক তৈরি করেনি। একবার রুল তৈরি হয়ে গেলে, সেই রুলকে অমান্য করা যায় না। কিন্তু রাজ্য সরকার নিজেদের রুলও মানেনি।’
আইনজীবী রউফ রহিম বলেন, ‘ধরা যাক আজ একজন কর্মী ১০,০০০ টাকা ডিএ পাচ্ছেন। ও দিকে পেট্রলের দাম বাড়ছে, অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়ছে। সেই মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্যই বর্ধিত ডিএ দেওয়া প্রয়োজন। রাজ্য বলতে পারে না, তারা বেতন কমিশনের সুপারিশ মানবে না। রাজ্য কোন নীতিতে, কোন ভিত্তিতে ডিএ পেমেন্ট করেছে, এর কোনও উত্তর নেই।’
রাজ্যের আইনজীবী শ্যাম দিওয়ান জানান, ২০১১ সালের আগে অন্য সরকার ছিল। ২০০৯ সালে তৈরি রোপাতে বলা হয়েছিল, দিল্লির বঙ্গভবনের কর্মীদের মেমোরেন্ডামেও বলা হয়েছিল, দিল্লি ও চেন্নাইয়ের কস্ট অফ লিভিং বিচার করে ডিএ দেওয়া হবে।
এ দিন আদালতে পরিসংখ্যান তুলে ধরে রাজ্যের আইনজীবী জানান, দিল্লিতে ২৪ জন কর্মী, চেন্নাইয়ে ৩৫ জন কর্মীকে অতিরিক্ত ডিএ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে ৯ লক্ষ কর্মী আছেন৷ চেন্নাইয়ের কর্মীদের ডিএ দেওয়া হয়েছে তামিলনাড়ু সরকারের ডিএ-র হারে, কেন্দ্রীয় হারে নয়। রাজ্য সরকার মূল্য বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখেই ডিএ দিচ্ছে।
তিনি আরও জানান, অফিস মেমোরেন্ডামই হলো আসল, তার ভিত্তিতে ডিএ প্রদান করা হয়ে থাকে৷ রাজ্যের ডিএ-র ভিত্তি রোপা ২০০৯। এটা স্ট্যাটিক। ২০০৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নোটিফায়েড হয়৷ আইনজীবীর দাবি, সময়ে সময়ে ডিএ বাড়ানো হবে, রাজ্যের মেমোতে সাফ বলা হয়েছিল। রোপা রুলে কোথাও বলা নেই যে, আলাদা সূচক তৈরি করে ডিএ দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে রাজ্যের আর্থিক নীতির উপরে ভিত্তি করে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে হবে এটা বাধ্যতামূলক নয়। রাজ্য সরকার ডিএ দেওয়া নিয়ে কখনই কোনও স্বেচ্ছাচারিতা করেনি।
এ দিন রাজ্যের কাছে বিচারপতি কারোল জানতে চান, ‘আপনি কি বলতে চাইছেন রোপা রুল ডিএ-র জন্য বাধ্যতামূলক নয়? আপনি রুল ৭-র কথা বলছেন। তা হলে রোপার ভূমিকা কী? তা হলে ডিএ-র জন্য কোন রুল ধার্য? আপনার বক্তব্য আমাদের মনে প্রশ্ন জাগাচ্ছে। যদি রোপা ডিএ-র ক্ষেত্রে নির্ণায়ক না হয়, তা হলে কোন রুল নির্ণায়ক?’
আইনজীবী দিওয়ান ফের সওয়াল করেন, এটা এনটাইটেলমেন্টের প্রশ্ন। ভবিষ্যতে ডিএ নির্ধারণের ক্ষেত্রে রোপা রুল শেষ কথা না-ও বলতে পারে। বিচারপতি কারোল জানান, কোন ভিত্তিতে ডিএ নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বোঝানো হোক আদালতকে।
জবাবে আইনজীবী দিওয়ান বলেন, ‘সরকার ডিএ দেওয়ার আগে মুদ্রাস্ফীতি বিশ্লেষণ করেছে। অন্যান্য বাজেটারি বিষয়ও মাথায় রেখেছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি আলাদা। আমাদের নীতি আলাদা। রাজ্যের পূর্ণ অধিকার আছে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। রাজ্য কোনও স্বেচ্ছাচারিতা করেনি।’ আজকের মতো ডিএ মামলার শুনানি শেষ। ফের মঙ্গলবার দুপুর ২টোয় এই মামলার শুনানি হবে।