• দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র নৈশভোজে কী নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা? যাওয়ার আগে ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
    আনন্দবাজার | ০৭ আগস্ট ২০২৫
  • বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যেতে যেতে তিনি যা বললেন, তাতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক এবং নৈশভোজে কী নিয়ে আলোচনা হতে চলেছে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলল। দেশ জুড়ে ভোটার তালিকার সংশোধন সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা থেকে শুরু করে ভারতীয় পণ্যে আমেরিকার ৫০ শতাংশ শুল্ক, একাধিক বিষয়কে বিরোধীরা হাতিয়ার করতে চলেছে। অভিষেকের মুখে উঠে এল পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গও।

    সম্প্রতি রাজ্যের রাজ্যের দুই ‘নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক’ (ইআরও) এবং দুই সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক (এআরও)-কে নিলম্বিত করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। চিঠি পাঠানো হয়েছে নবান্নে। এমনকি, ওই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে এফআইআর দায়ের করতেও বলা হয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামের সভা থেকে জানিয়ে দেন, কাউকে শাস্তি দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে রাজ্যের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অভিষেক বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন যে কাজ করছে, তা এক্তিয়ার বহির্ভূত। সাধারণত আদর্শ আচরণবিধি ঘোষণার পরে কমিশনের দায়িত্ব বা ক্ষমতা কার্যকর হয়। তখন কমিশন রাজ্যের সার্বিক সিভিল এবং পুলিশ প্রশাসন হাতে নিয়ে নিজেদের মতো পরিচালনা করতে পারে, যাতে নিরেপক্ষ ও স্বচ্ছ ভোট হয়। কিন্তু এখন তো কমিশন নির্বাচিত সরকারকে কাজ করতে দেবে না বলে এক-দেড় বছর আগে থেকেই তৎপর।’’ অভিষেকের দাবি, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতেই কমিশন কাজ করছে। যে ভাবে এর আগে কেন্দ্র বিচারব্যবস্থা এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশকে কাজে লাগিয়েছে, সে ভাবে এখন কাজে লাগানো হচ্ছে কমিশনকে। অভিষেক বলেন, ‘‘যাতে বাংলার প্রকৃত বাঙালিরা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারেন, সেই চেষ্টা চলছে। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য কমিশনের এই ভূমিকা নির্লজ্জ।’’

    শুক্রবার দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাও করতে চলেছে বিরোধীরা। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষায় (এসআইআর) ‘কারচুপির’ যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি। অভিষেক তাতে যোগ দেবেন। তার আগে বৃহস্পতিবারের নৈশভোজ এবং বৈঠকেও কমিশনের তৎপরতার প্রসঙ্গ উঠবে, অভিষেকের বক্তব্যে তারই ইঙ্গিত মিলল। ঘেরাও কর্মসূচির রূপরেখা বৃহস্পতিবারই স্থির করে নিতে পারেন অভিষেকেরা।

    বিহারে এসআইআরে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। পরের বছর ভোট রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ তিনটি অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে। তাই এই এসআইআর নিয়ে ‘কারচুপি’-র অভিযোগের বিষয়টি জাতীয় স্তরে নিয়ে যেতে চাইছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা। মূলত তাঁর পরামর্শেই শুক্রবারের ঘেরাও কর্মসূচির আয়োজন। অভিষেক বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচিত সরকার কেবল রাজ্যের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য, আরও কারও কাছে নয়। বিচারব্যবস্থাকে আমি সম্মান করি। কিন্তু ২০২১ সালের পর থেকে গত চার বছরে ৫০টিরও বেশি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাই কোর্টে প্রভাব খাটানো হয়েছে তৃণমূলকে চাপে রাখতে এবং বাংলাকে ছোট করতে। আরজি কর নিয়েও বাংলার দুর্নাম ছড়ানো হয়েছিল সারা দেশে। কিন্তু কলকাতা পুলিশ ২৪ ঘণ্টায় যা করেছিল, সিবিআই এক বছরে তার বেশি কিছু করতে পারেনি।’’ জলজীবন প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ অভিষেকের।তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের হয়ে ট্রাম্প এখানে প্রচার করতে এসেছিলেন, যাঁরা ট্রাম্পের হয়ে আমেরিকায় প্রচার করতে গিয়েছিলেন, শুল্ক নিয়ে তাঁদের প্রশ্ন করা উচিত। কারণ এই শুল্কের প্রভাব পড়তে চলেছে দেশের অর্থনীতিতে। এটা আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতা। কঠোর ভাবে এর মোকাবিলা করা উচিত।’’ ট্রাম্পের হয়ে মোদীর প্রচারের একটি ভিডিয়ো ক্লিপও দেখান অভিষেক। বিরোধীদের বৈঠকে শুল্ক নিয়ে কেন্দ্রকে চাপে ফেলার কৌশলও আলোচনা হতে পারে।

    পহেলগাঁওয়ের হামলার পর অভিষেক ভারতের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসাবে পাঁচটি দেশে গিয়েছিলেন। সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথা প্রচার ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। কিন্তু যে সমস্ত দেশে প্রতিনিধিদল গিয়েছে, অধিকাংশ দেশই পহেলগাঁওয়ের বিরোধিতা করে কোনও বিবৃতি পর্যন্ত দেয়নি। পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টিও করা হয়নি। কেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর পুনর্দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে না? প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)