ভিজে সাদা হয়ে যাওয়া দু’টি নিথর পায়ের পাতা উঁকি দিচ্ছে লাল চাদরের ভিতর থেকে। দেহের ভারে চাদর ডুবে গিয়েছে রাস্তার জমা জলে। চাদরের দুই প্রান্ত ধরে জলে ডোবা অবস্থাতেই ডোমেরা নিয়ে যাচ্ছেন দেহটি। বুধবার দুপুরে এই ছবি ধরা পড়ল বারাসতের একটি এলাকায়। অভিযোগ, বিগত কয়েক দিন ধরে এলাকার জলবন্দি দশা চলছে। পাড়ায় পুলিশের গাড়ি ঢুকতে না পারায় ওই ভাবেই দেহটি এ দিন দুপুরে একটি বাড়ি থেকে বার করা হয়। দিনকয়েক আগেই একটি ভাইরাল ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে জলবন্দি এলাকায় কলাগাছের ভেলায় চাপিয়ে এক মহিলার দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ দিনের ঘটনাস্থল বারাসত পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের লোকনাথ সরণি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁরা গত কয়েক দিন ধরেই জলবন্দি দশায় কাটাচ্ছেন। কিন্তু এ ভাবে দেহ বার করার ঘটনায় তাঁরাও হতবাক ও ক্ষুব্ধ বলেই জানাচ্ছেন বাসিন্দাদের বড় অংশ। ওই ভাবে চাদরে ঝুলিয়ে দেহ বার করায় অস্বস্তিতে পড়েছে স্থানীয় পুর প্রশাসনও।
স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি শিল্পী দাসের অবশ্য দাবি, অন্যান্য সব জায়গার জল ওই এলাকায় ঢুকে আসছে। কারণ, এলাকাটি কড়াইয়ের মতো। তিনি বলেন, ‘‘আশপাশের বড় বড় মাছ চাষের পুকুর ডুবে গিয়ে জল লোকনাথ সরণির দিকে ঢুকছে। আমরা চেষ্টা করছি জল বার করতে। দেহটি যাঁরা তুললেন, তাঁরা চাইলে সাইকেল ভ্যান নিয়ে ওই বাড়িতে যেতে পারতেন। কেন ওই ভাবে তাঁরা দেহ বার করলেন, সেটা আমারও প্রশ্ন।’’
বারাসত পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত ওই ব্যক্তির নাম সায়ক চক্রবর্তী (৪০)। এ দিন দুপুরে লোকনাথ সরণি থেকে বারাসত থানায় ওই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, এলাকা জলমগ্ন থাকায় ডোমেরা চাদরে দেহটি জড়িয়ে কার্যত জলের মধ্যে দিয়ে ঝুলিয়ে নিয়ে গিয়েই ভ্যানে তোলেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই ব্যক্তি মদ্যপ ছিলেন। মায়ের সঙ্গে থাকতেন। মত্ত অবস্থায় বাড়ির ভিতরে জলের মধ্যে পড়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
দিনকয়েক আগে বাড়ির ভিতরেই জমা জলের মধ্যে পড়ে বিরাটিতে এক পাঁচ মাসের শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। লোকনাথ সরণির বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে ওই এলাকার বহু বাড়ির ভিতরেই জল ঢুকে গিয়েছে। তাঁদের অনুমান, মঙ্গলবার রাতে কোনও ভাবে ওই জলের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে যান সায়ক। এ দিন ঘরে জমা জলে সায়কের দেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় মানুষ বারাসত থানায় খবর দেন। তার পরে ওই ভাবে দেহ নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশের পাশাপাশি তাঁরা এমন জলবন্দি পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পুর প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বুলারানি দাস নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এখানে নিকাশির কোনও ব্যবস্থা নেই। এক মাস জলবন্দি দশা চলছে। সায়ক মত্ত অবস্থায় থাকলেও ঘরে জল না থাকলে হয়তো মৃত্য়ু হত না।’’
বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘অতীতে ওই জায়গায় ইটভাটা ছিল। মাটি ভরাট করে বসতি তৈরি হওয়ায় এলাকা একেবারে নিচু। আশপাশের পুকুর উপচে জল এলাকায় ঢুকছে। অন্য দিকে, নোয়াই খালের জল উঁচু দিয়ে বইছে। ফলে এ দিকের জল নামছে না। এ দিন কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারেরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।’’