বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেই উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর যাত্রীদের ভোগান্তি মনে করিয়ে দিচ্ছে শহরতলির লোকাল ট্রেনের অবস্থার কথা। দক্ষিণেশ্বর থেকে ছেড়ে আসা মেট্রো কোনও ঘোষণা ছাড়াই পাঁচ থেকে সাত মিনিট দাঁড়িয়ে থাকছে হয় শ্যামবাজার অথবা গিরিশ পার্কে। এর পরে সেই মেট্রো ফের কালীঘাটে পৌঁছে থমকে যাচ্ছে। সেখানে কয়েক মিনিট কাটিয়ে রবীন্দ্র সরোবর কিংবা মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনে পৌঁছে ফের একই ছবি। কবি সুভাষমুখী ডাউন লাইনে সন্ধ্যার পর থেকে মেট্রোর এই খুঁড়িয়ে চলাকে যাত্রীদের অনেকেই হাওড়া পৌঁছনোর আগে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টিকিয়াপাড়া কিংবা সাঁতরাগাছি স্টেশনে লোকাল ট্রেনের আচমকা দাঁড়িয়ে যাওয়ার অবস্থার সঙ্গে তুলনা করছেন। এর ফলে হামেশাই আধ ঘণ্টার সফর শেষ করতে লাগছে অন্তত ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট। শুধু তা-ই নয়, আরও পরে রাত ১০টা ৪০ মিনিটের মেট্রো চলছে গড়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট দেরিতে।
এই যদি হয় ডাউন লাইনের চিত্র, তখন আপ লাইনে দক্ষিণেশ্বরমুখী মেট্রোয় দেখা দিচ্ছে অন্য সমস্যা। ট্রেনের ব্যবধান বেশি হওয়ায় কালীঘাটের পর থেকেই মেট্রোয় কার্যত পা রাখার জায়গা থাকছে না। বিশেষত, এসপ্লানেড এবং চাঁদনি চক স্টেশন থেকে অনেকেই ভিড়ের চাপে উঠতে না পেরে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। প্ল্যাটফর্মে রক্ষী মোতায়েন করেও সমস্যা মেটানো যাচ্ছে না। অগস্টের শুরুতে এই অবস্থা হলে পুজোর বাজারের সময়ে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা ভেবে ঘুম ছুটেছে মেট্রোর আধিকারিকদেরই।
ডাউন লাইনে সমস্যা ঠিক কোথায়? মেট্রো সূত্রের খবর, কবি সুভাষ স্টেশনের আপ প্ল্যাটফর্মে ফাটল ধরায় এখন সেটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দক্ষিণেশ্বর থেকে আসা ট্রেন ওই স্টেশনের ডাউন প্ল্যাটফর্ম ধরে পুরোটা যাওয়ার পরে গার্ড এবং চালক বদল হচ্ছে। এর পরে ফাঁকা ট্রেনটি ডাউন লাইন ধরে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনের দিকে পিছিয়ে এসে ট্র্যাক বদল করে আপ লাইনে উঠছে। ফলে, যত ক্ষণ না একটি ট্রেন কবি সুভাষ স্টেশনের ডাউন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, তত ক্ষণ অন্য ট্রেনটি শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশন থেকে কবি সুভাষ অভিমুখে আসতে পারছে না। সব দেখে মেট্রোর আধিকারিকদের একাংশই প্রশ্ন তুলছেন, কেন কিছু ট্রেন মহানায়ক উত্তমকুমার এবং দমদম অথবা দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে চালানো হচ্ছে না?
মেট্রোকর্তাদের অবশ্য দাবি, সমস্যা মেটাতে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশন থেকে ট্রেন ঘোরানোর ক্রসওভার তৈরি করার কথা ভাবা হয়েছে। তবে, সংস্থার প্রাক্তন কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, পরিষেবা পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনাতেই ত্রুটি রয়েছে। কলকাতা মেট্রোর প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সমস্যার গভীরে না গিয়ে উপর থেকে সমাধান চাপিয়ে দেওয়ার ফলে যাত্রী-ভোগান্তি বাড়ছে।’’ মেট্রো কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, এই ভোগান্তি সাময়িক। সমস্যা সমাধানে সব রকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে।