• ‘দুগ্গা, দুগ্গা’... টার্মিনালে ১৬ রাত কাটিয়ে ‘ফিট টু ফ্লাই’-এর অপেক্ষায় বেড়াল
    এই সময় | ০৭ আগস্ট ২০২৫
  • সুনন্দ ঘোষ

    ‘ফিট–টু–ফ্লাই’ — চিকিৎসকের কাছ থেকে এই সার্টিফিকেট পেলেই উড়ে যাবে দুগ্গা। কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরু।

    যাওয়ার কথা ছিল ৮ জুলাই। পালক বাবা ও দাদুর সঙ্গে কলকাতা বিমানবন্দরে ঢুকেওছিল সে। কিন্তু, সিকিউরিটি চেক–এর সময়ে চারপাশ থেকে এমন বিচ্ছিরি ‘ক্যাঁ ক্যাঁ’ শব্দ হতে থাকে যে তা শুনে আত্মারাম খাঁচাছাড়া। দাদুর কোলে ছিল দুগ্গা। সেখান থেকেই লাফ মেরে সটান এসি পিলারের তলায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ে।

    বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ২৩ জুলাই দুগ্গাকে ধরা হয়েছে বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকেই। বাবা ৮ জুলাই চলে গিয়েছেন বেঙ্গালুরু। দাদু গিয়ে ফিরে এসেছেন কলকাতায়। এখন দুগ্গাও কলকাতায়। রয়েছে বাবার এক বন্ধুর কাছে।

    বেঙ্গালুরু থেকে তার বাবা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ফোনে বলেন, ‘৮ থেকে ২৩ জুলাই — প্রায় ১৬ দিন কী খেয়েছে, কতটা খাবার পেয়েছে, কিছু জানি না। কলকাতা বিমানবন্দরের কর্মী–অফিসারেরা হেল্প না করলে ওকে ফিরেই পেতাম না। এখনও চিকিৎসা চলছে। ফিট–টু–ফ্লাই সার্টিফিকেট পেলেই ওকে কার্গো–তে বুক করে বেঙ্গালুরু নিয়ে আসব।’

    দুগ্গার বাবা ছিলেন দিল্লিতে। ডিজিটাল মার্কেটিং–এ রয়েছেন। ৩৫ বছরের একা যুবক দু’টি বেড়ালকে নিয়েই থাকেন। দুগ্গা ও সুসি — দুই যমজ বোন। সম্প্রতি দিল্লি থেকে শিফট করেছেন বেঙ্গালুরুতে। নতুন চাকরি। তাদের বাহারি বাক্সে ভরে দিল্লি থেকে এসি ফার্স্ট ক্লাসে কলকাতায় এসেছিলেন।

    যুবকের বাবা–মা থাকেন কসবায়। কিছু দিন কসবার বাড়িতে কাটিয়ে ও ভাবেই তাদের নিয়ে বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ট্রেনের টিকিট মেলেনি। তাড়া ছিল চাকরিতে জয়েন করার। তাই ফ্লাইটের টিকিট বুক করেন। অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে সঙ্গে কেবিন–লাগেজ হিসেবে মার্জার (বা অন্য ছোট পশু যা বাক্সে নিয়ে যাওয়া যাবে) নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় এয়ারলাইন্স। কিন্তু, একজন যাত্রী এমন একটিই বাক্স নিয়ে যেতে পারেন।

    ঠিক হয়, সেই কারণে দুগ্গার বাবার সঙ্গে দাদুও যাবেন। বাবার সঙ্গে সুসি এবং দাদুর সঙ্গে দুগ্গা। দুগ্গার বাবার কথায়, ‘সবকিছু ঠিক ছিল। সিকিউরিটি চেক–এ সেই বাক্স খুলে চেকিং শুরু হয়। সুসি ও দুগ্গাকে আমরা কোলে নিয়ে নিই। ভয় পেয়ে একটু ছটফট করলেও আমার কোলে থাকা সুসি তেমন কিছু করেনি। কিন্তু, মেটাল ডিটেক্টর ডোরের ওই ক্যাঁ ক্যাঁ আওয়াজে ভয় পেয়ে দুগ্গা বাবাকে আঁচড়ে–কামড়ে লাফিয়ে কোল থেকে নেমে পড়ে।’

    শুধু তিনি নন, সে দিন প্রায় ঘণ্টা তিনেক ধরে বিমানবন্দর ও আকাশ এয়ারের কর্মী, সিআইএসএফ — সবাই খুঁজেও নাগাল পাননি দুগ্গার। ফ্লাইট ধরার তাড়ায় তাকে রেখেই সুসিকে নিয়ে বেঙ্গালুরু উড়ে যেতে হয় বাবা ও দাদুকে।

    এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কলকাতা বিমানবন্দরের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন দুগ্গার বাবা। মন খারাপ। সেটা বুঝেই টার্মিনালের ভিতরে দুগ্গার খোঁজ করে যাচ্ছিলেন বিমানবন্দরের অফিসার–কর্মীরা। এক–দু’দিন নয়, এ ভাবে কেটে যায় প্রথম ১৩ দিন। টার্মিনালে মাঝে মাঝে ঢুকে আসে অন্য বেড়ালও। কিন্তু, দুগ্গার চেহারা তো একেবারে আলাদা! বছর দুয়েক বয়স। কটা চোখ। গায়ে বাঘের মতো হলুদ–কালো ডোরা। একেবারে বাঘের মাসিই বটে!

    ২০ জুলাই প্রথম তার দেখা মেলে সন্ধ্যার অন্ধকারে টার্মিনালের এক কোনায়। খানিকটা ভীত–সন্ত্রস্ত। দুগ্গার বাবা সে খবর পেয়ে ছবি পাঠাতে বলেন। সে ছবি দেখে শনাক্ত করেন তিনি। কিন্তু, নাটকের যবনিকা তখনও পড়েনি। দেখা গেলেও ধরবে কে! যে দাদুকে আঁচড়ে–কামড়ে কোল থেকে পালিয়ে যেতে পারে, তাকে ধরতে গেলে অজ্ঞাত কাউকে সে কী ভাবে স্বাগত জানাবে, তা নিয়ে সন্দেহ বাড়তে থাকে। ফলে, তাকে ২০ তারিখ থেকে এদিক–সেদিক দেখা গেলেও কেউ ধরতে রাজি হন না। শেষে মৌখিক ভাবে জানানো হয়, যে ধরে দেবেন, তিনি ৫০০ টাকা পুরস্কার পাবেন।

    ২৩ তারিখ ধরা পড়ে দুগ্গা। একটি এসি ডাক্টের কাছে বসে ছিল। পিছন থেকে বস্তা চাপা দিয়ে ধরা হয় তাকে। দুগ্গার বাবার বন্ধু এসে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে গিয়েছে তাকে। চলছে চিকিৎসা। এখন অনেকটাই সুস্থ। অপেক্ষা শুধু ‘ফিট টু ফ্লাই’ সার্টিফিকেটের। এ বার বিমানবন্দরে বাক্স–বন্দি হয়ে ঢুকলেও সেই বাক্সের ঢাকনা আর খোলা হবে না বলেই জানা গিয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)