বাংলা ভাষা কানে আসতেই ভিনরাজ্যে পুলিশি হেনস্থার শিকার হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকেরা। বর্তমানে একই ঘটনা ঘটেই চলেছে। বাংলার একাধিক পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে চলছে অত্যাচার। ঘটনায় বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির বিরোধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী সর্বদা কড়া সুরে এর প্রতিবাদ করেছেন। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে শুরু করে আরামবাগ, ঘাটাল পরিদর্শনের সময়েও তাঁর সুরে ছিল সর্বত্র এই ঘটনার প্রতিবাদ। অত্যাচারিত বাংলাভাষী শ্রমিকদের রক্ষা করার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তেমনিই মহারাষ্ট্রে গিয়ে বিষ্ণুপুরের বাবাই সর্দারকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহায়তায় একটি তৃণমূল কমিটি গিয়ে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয়। বাড়ি ফিরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও, অত্যাচারের কথা মনে পড়তেই আঁতকে উঠছেন বাবাই।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিষ্ণুপুরের জুলপিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাবাই সর্দার কর্মসূত্রে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়েই তাঁকে পুলিশি অত্যাচারের শিকার হতে হয়। বাংলা ভাষায় কথা বলতে শুনে বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশ আটক করে তাঁকে। এরপর থানায় নিয়ে গিয়ে চলে তাঁর উপর অত্যাচার। একাধিকবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে উপযুক্ত প্রমাণপত্র দেখানো হলেও তাঁকে বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হয়। এরপর থানায় আটকে রেখে তাঁর উপর অত্যাচার করে পুলিশ। মারধরও করা হয় বাবাইকে। ক্যাম্পে থাকাকালীন বাংলাদেশে পুশব্যাক করে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখানো হয় তাঁকে। এরপরে সেখান থেকেই বিষ্ণুপুরে বাবাইয়ের বাড়িতে তাঁকে পাকড়াও করার খবর পৌঁছে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে আতঙ্কিত হন পরিবারের সদস্যরা। এরপরে প্রশাসনকে জানান তাঁরা। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় বিধায়ক দিলীপ মণ্ডলের ৪ জনের প্রতিনিধি দল এবং পুলিশ আধিকারিকসহ একটি উদ্ধারকারী দল মহারাষ্ট্রে গিয়ে বাবাই সর্দারকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
প্রথমে নাগপুর থেকে ফিরে আসতে না চাইলেও পরে পরিবারের অনুরোধে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে বিষ্ণুপুরের বাড়িতে ফিরে আসেন। বাবাইকে কাছে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তাঁর পরিবারের লোকেরা। এরপরে বাবাই জানায়, মহারাষ্ট্রের পুলিশ তাঁর উপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করেছিল। মারধরের পাশাপাশি খেতেও দেওয়া হচ্ছিল না তাঁকে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দিলীপ মণ্ডল সহ যাঁরা তাঁকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছিলেন তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাবাই সর্দার। তিনি বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক ও পুলিশ যাঁরা আমাকে ফিরিয়ে এনেছেন তাঁদেরকে ধন্যবাদ।’ তিনি বাংলায় থেকে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন।
ঘটনার পরে বিধায়ক দিলীপ মন্ডল বলেছেন, ‘বিষ্ণুপুরের যুবকটিকে বাংলায় ফিরিয়ে আনতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সঙ্গে অনেক সহায়তা করেছেন। সর্বদা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। সকলের প্রচেষ্টায় ঘরে ফিরেছেন বাবাই। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা আমাদের কাজ করেছি।’ বাবাই সর্দারের মা বলেছেন, ‘আমরা বুঝতেই পেরেছিলাম মহারাষ্ট্রে ভালো নেই বাবাই। ওখানে থাকা যে নিরাপদ নয় তাও বলেছিলাম ছেলেকে। বাবাই জানিয়েছিল টাকাপয়সা জোগাড় করে সে ফিরে আসবে। মঙ্গলবারেই যে ফিরে আসবে তা জানতাম না।’