• বাংলা ছবির প্রদর্শন সঙ্কট নিয়ে ক্ষুব্ধ ঋতুপর্ণা, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কী বার্তা দিলেন?
    আনন্দবাজার | ০৬ আগস্ট ২০২৫
  • রাগে ফেটে পড়লেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত! যে মেজাজে তাঁকে চট করে দেখা বা শোনা যায় না। তাঁর মেজাজ হারানোর কারণ, হিন্দি ছবির তথাকথিত ‘দাপটে’ বাংলা ছবির প্রদর্শনে সঙ্কট। বস্তুত, এই বিষয়টি নিয়েই মঙ্গলবার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত মোহতা, নিসপাল সিংহ রানে-সহ বাংলা বিনোদন দুনিয়ার প্রথম সারির সমস্ত ব্যক্তিত্ব একজোট হয়ে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁদের ক্ষোভ, বলিউডের আগ্রাসনে বাংলা ছবি কোণঠাসা। ১৪ অগস্ট মুক্তি পাচ্ছে দেব-শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘ধূমকেতু’। পাশাপাশি, ১৫ অগস্ট মুক্তি পাবে হৃতিক রোশন-কিয়ারা আডবাণী অভিনীত ‘ওয়ার ২’। হিন্দি ছবির পরিবেশকদের শর্ত, সিঙ্গল স্ক্রিনের চারটি শো ছবিকে দিলে তবে বাংলায় ছবিটি মুক্তি পাবে। তারা দেবের ছবির সঙ্গে শো ভাগ করবেন না।

    এরই প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি দেন টলিউডের খ্যাতনামীরা। এর পরেই আনন্দবাজার ডট কমের কাছে এই প্রসঙ্গে একান্তে ক্ষোভ উগরে দিলেন ঋতুপর্ণাও। রীতিমতো ঝাঁজালো গলায় তাঁর প্রশ্ন, তাঁরও তো একের পর এক ছবি নেমে যাচ্ছে! কই তাঁকে তো ডাকা হল না? তিনি এও বলেছেন, “‘সইয়ারা’ সুনামিতে ভেসে গিয়েছে বাংলা ছবি। সেই নিয়েও কেন কথা বললেন না কেউ?” তিনি দেখেছেন, কোথাও বাংলা ছবি হাউসফুল থাকা সত্ত্বেও ছবির সময় বদলে দেওয়া হয়েছে। কখনও হল থেকেই ছবি নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রযোজক-নায়িকার মতে, “ওই ছবিগুলোর জন্যেও তো ডিস্ট্রিবিউটরদের থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে।” তা হলে তাঁদের সঙ্গে এই আচরণ কেন?

    ৩০ বছর ধরে বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ঋতুপর্ণা। সেই জায়গা থেকেই তাঁর উপলব্ধি, “বাংলা সিনেমার নিজস্ব মনন আছে, সৃষ্টিশীলতা আছে। সেই জন্যই সারা বিশ্বে বাংলা ছবি এত সমাদৃত। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটকের নাম মুখে মুখে ফেরে।” অথচ, তাঁদের পরিচালিত ছবিও এক রাতে সাফল্য পায়নি। তার পরেও এই তিন পরিচালকের ছবি সারা বিশ্বে সম্মান আদায় করে নিয়েছে। নায়িকার আফসোস, “হয়তো আমাদের শহর বা রাজ্যের সব মানুষ এর কদর বোঝেন না। কিন্তু কিছু দর্শক তো বোঝেন! তাঁরা তো দেখতে চান!” সেই ধারার ছবি যদি এখন বানানো হয় এবং সেগুলো দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় না দেওয়া হয়, তা হলে চলবে কী করে! সাম্প্রতিক বাংলা বিনোদন দুনিয়ার এই ‘অরাজকতা’য় বিস্মিত অভিনেত্রী।

    নায়িকা প্রযোজকদের হয়েও সওয়াল করেছেন। তাঁর কথায়, “দু’কোটি, আড়াই কোটি দিয়ে যদি প্রযোজক ছবি বানান, তা হলে তাঁকে অন্তত দু’সপ্তাহ ছবি চালাতে দেওয়া হবে না?”

    ঋতুপর্ণার অনুরোধ, দর্শককে ছবি বাতিল করার সময়টুকু অন্তত দেওয়া হোক। তাঁরা ছবি দেখুন, বুঝুন। তাঁদের ভাল না লাগলে, ছবি দেখতে না এলে তখন না হয় হল থেকে ছবি নামিয়ে দেওয়া হবে। সময় না পেলে পরিচালকেরা নিজেদের প্রমাণ করবেন কী করে? অভিনেত্রীর ক্ষোভ, “কারও ছবি এক সপ্তাহে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারও তার আগে। প্রযোজকেরা মাথা চাপড়ে চলে যাচ্ছেন! অনুযোগ করছেন, ‘দিদি, আপনিই তো ছবি বানাতে বলেছিলেন! অথচ তাঁদের ছবি কিন্তু চলছিল।’”

    প্রযোজকদের হয়ে, বাংলা ছবির স্বার্থে, ছবিগুলো যাতে দেখানো হয়— তার জন্য ঋতুপর্ণা কখনও দৌড়েছেন পরিবেশকের কাছে। কখনও হলমালিকের কাছে। সর্বত্র এক ছবি! প্রত্যেকের মুখে এক কথা শুনতে শুনতে বীতশ্রদ্ধ তিনি। ছবি কেন নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এই প্রশ্ন করলেই তাঁকে পাল্টা বোঝানো হচ্ছে, “জানেনই তো সব!” ক্ষোভে ফেটে ফেটে পড়তে পড়তে ঋতুপর্ণা বলেছেন, “কী জানতে হবে! কী জানব! না, আমি জানি না! আমায় জানাও তোমরা।”

    তিনি প্রশ্ন রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও। জানতে চেয়েছেন, অন্য প্রযোজকেরা কী দোষ করেছেন? দক্ষিণ ভারত থেকে প্রযোজক এসে ছবি বানিয়ে যাচ্ছেন। সেই ছবি দর্শক-প্রশংসিত। তবু সেই ছবি সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ থেকে! এই অরাজকতা আর কত দিন?

    তাঁর যুক্তি, “সব ছবি ‘সইয়ারা’ নয় যে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাউসফুল বোর্ড থাকবে! ১০টা, ১১টা বা ১২টায় শো দিলে কাজের দিনে কে দেখতে যাবেন?” এ প্রসঙ্গে ঋতুপর্ণা তাঁর ‘ম্যাডাম সেনগুপ্ত’ ছবির উদাহরণ টেনেছেন। নায়িকার বক্তব্য, ছবিটি হাবড়া, রাধা স্টুডিয়োয় হাউসফুল যাচ্ছে। তবু ছবি নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঋতুপর্ণার ব্যঙ্গ, “প্রতিভা অনেক আছে। কিন্তু সেই প্রতিভা দেখানোর লোক না থাকলে লাভ কী? এ ভাবে একের পর এক ছবি নামিয়ে দিলে, প্রযোজক, পরিচালকেরা চলে যাবেন। তখন নতুন প্রতিভাদের তুলে ধরবেন কে?”

    ‘ধূমকেতু’র জন্য সকলে সোচ্চার হয়েছেন। বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ঋতুপর্ণা। পাশাপাশি তাঁর কৌতূহল, এত দিন ধরে এত ছবির জন্য বাকিরা যথেষ্ট বক্তব্য রেখেছেন। তাঁর মতে, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি না দেওয়া হলেও যেখানে বলার বা আর্জি জানানোর জানানো হয়েছে। সে সব কী হল?
  • Link to this news (আনন্দবাজার)