• বঙ্গের সাংসদদের নিয়ে দিল্লিতে ফের বৈঠক বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতার, এসআইআর রূপায়ণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ
    আনন্দবাজার | ০৬ আগস্ট ২০২৫
  • পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিকে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ (এসআইআর) নিয়ে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বুধবার রাতে বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের নয়াদিল্লির বাসভবনে পশ্চিমবঙ্গের সকল বিজেপি সাংসদকে নিয়ে বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল। ঘণ্টা দেড়েকের বৈঠকে তিনি একগুচ্ছ জনসংযোগ কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর। তবে এসআইআর প্রক্রিয়ার রূপায়ণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলেছেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।

    সোমবার বিকেলে অমিত শাহ সংসদ ভবনে নিজের দফতরে বৈঠকে বসেছিলেন বঙ্গ বিজেপিকে নিয়ে। সে বৈঠকে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন পর্যবেক্ষক তো ছিলেনই। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষও ছিলেন। প্রথমে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছিল, শাহের ওই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের সব বিজেপি সাংসদ থাকবেন। পরে জানা যায়, সাংসদদের নয়, রাজ্য বিজেপির পাঁচ সর্বোচ্চ নেতাকে সে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সেই বৈঠকের নির্যাস ও নির্দেশ জনপ্রতিনিধিদের কাছেও পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বুধবার রাতে সুকান্তের বাসভবনে হওয়া বৈঠকে বনসল সেই কাজই করেছেন।

    বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর যাতে সফল ভাবে রূপায়িত হয়, সাংসদদের তা দেখতে বলেছেন বনসল। আপাতত সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব এসআইআর-এর উপরেই দিতে বলেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে ‘ভুয়ো সচিত্র ভোটার পরিচয় পত্রের’ চেয়েও ‘ভুয়ো আধার কার্ডের’ সংখ্যা অনেক বেশি— এমন তথ্য নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। এলাকাভিত্তিক হিসেব অনুযায়ী যে সব অঞ্চলে সর্বোচ্চ সংখ্যক ‘ভুয়ো আধার কার্ড’ রয়েছে বলে বিজেপির দাবি, সেখানে জনসংখ্যার চেয়ে আধার কার্ডের সংখ্যা ২৭ শতাংশ বেশি। যে সব এলাকায় ‘ভুয়ো আধার’ সবচেয়ে কম, সেখানেও জনসংখ্যার চেয়ে আধারের সংখ্যা ৭ শতাংশ বেশি বলে বিজেপির দাবি। এ সব হিসেব নিয়েও বুধরাতের বৈঠকে কাটাছেঁড়া হয়েছে বলে খবর। তাই ‘ভুয়ো নাম’ ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাতেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে বলেছেন বনসল।

    তিন দফা জনসংযোগ কর্মসূচিও দেওয়া হয়েছে বঙ্গ বিজেপিকে। অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই এলাকায় এলাকায় ‘তিরঙ্গা যাত্রা’ বার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৪ অগস্ট গোটা রাজ্যে ‘বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস’ পালন করতে বলা হয়েছে। বাংলা ভাষা ও বাঙালি অস্মিতাকে ‘হাতিয়ার’ করে তৃণমূল যে ভাবে বিজেপিকে এখন কোণঠাসা করতে উদ্যত, তাতে অখণ্ড বাংলার তথা দেশের বিভাজনের কারণ এবং সেই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ আরও বেশি করে প্রচারে আনা দরকার বলে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন। গোটা রাজ্যে যুবসমাজের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে বলা হয়েছে। যে সব এলাকায় বিজেপির সাংসদ বা বিধায়কেরা রয়েছেন, সেখানে তাঁদের উদ্যোগে, যেখানে বিজেপির জনপ্রতিনিধি নেই, সেখানে সাংগঠনিক উদ্যোগে এই খেলাধুলোর আসর আয়োজন করার নির্দেশ বৈঠকে দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।

    বনসলের ডাকা বৈঠকে রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য তো ছিলেনই। অন্য সাংসদেরাও সকলে ছিলেন। রাজ্যসভার যে সাংসদ অনন্ত মহারাজকে অনেক কর্মসূচিতেই দেখা যায় না, এই বৈঠকে তিনিও ছিলেন। এমনকি রাষ্ট্রপতি মনোনীত রাজ্যসভা সাংসদ হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও বুধরাতের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। রাত ৮টা নাগাদ বৈঠক শুরু হয়। চলে প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। বৈঠক শেষে সুকান্তের বাসভবনেই ছিল নৈশভোজের ব্যবস্থা। আমিষপ্রিয়দের জন্য ইলিশ-সহ দু’রকমের মাছ, মুরগির মাংস, খাসির মাংসের বন্দোবস্ত ছিল। নিরামিষাশীদের জন্য ছিল আলাদা ব্যবস্থা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)