সাসপেন্ড-বিতর্ক: নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ না হলে মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে! বলছে নির্বাচন কমিশন
আনন্দবাজার | ০৬ আগস্ট ২০২৫
রাজ্যের দুই ‘নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক’ (ইআরও)-এর বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন কমিশনের কাছে জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, নির্দেশ মতো ব্যবস্থা না-হলে মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করতে পারে তারা।
দুই ইআরও-কে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করার নির্দেশ দিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠিয়েছিল কমিশন। কমিশনের এক আধিকারিক জানান, ওই বিষয়ে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিয়ে কমিশনকে জবাব দিতে বাধ্য মুখ্যসচিব। জবাবে সন্তুষ্ট না হলে অথবা কোনও ব্যাখ্যা না পেলে মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হবে। কমিশন সূত্রে খবর, এমন কোনও আইন নেই যে নির্বাচন ঘোষণা হলে কমিশনের ক্ষমতা থাকবে। কমিশন এবং ইআরও-র মাঝে আর কেউ নেই বলেই দাবি ওই সূত্রের।
বুধবারই ঝাড়গ্রামের সভা থেকে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি কারও কোনও পানিশমেন্ট (শাস্তি) হতে দেব না।’’ মমতা আরও বলেন, “নির্বাচনের এখনও অনেক দেরি। তা সত্ত্বেও কমিশন অতিসক্রিয়। এখন থেকেই সাসপেন্ড করতে শুরু করেছে।” কমিশনকে ‘অমিত শাহের হাতের পুতুল’ এবং ‘বিজেপির বন্ডেড লেবার’ বলেও নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরই কমিশন সূত্রে জানা যায়, নির্দেশ মোতাবেক পদক্ষেপ না হলে মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করতে পারে তারা। তাদের ব্যাখ্যা, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ সারা বছর ধরে হতে পারে। এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। সংবিধানের ৩২৪ ধারা কমিশনকে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে ভোটার তালিকা তৈরি করা এবং নির্বাচন করানোর। সেই কাজে লোক দিতে বাধ্য রাজ্য সরকার।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুর পূর্ব এবং পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার তালিকার কাজ যাঁদের তত্ত্বাবধানে চলছিল, সেই দুই ইআরও এবং দুই সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক (এআরও)-কে নিলম্বিত করার জন্য সম্প্রতি রাজ্যকে চিঠি পাঠায় কমিশন। তাঁদের বিরুদ্ধে ‘অনিয়মের’ অভিযোগ তুলে এফআইআর দায়েরের নির্দেশও দেয় তারা। অবিলম্বে এই নিলম্বন এবং শৃঙ্খলাভঙ্গ সংক্রান্ত পদক্ষেপ তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যকর হচ্ছে বলে কমিশনের চিঠিতে লেখা হয়েছে।
ওই চার জনের মধ্যে দু’জন রয়েছেন ডব্লিউবিসিএস আধিকারিক। তাঁদের বিরুদ্ধে কমিশনের নির্দেশের প্রেক্ষিতে বুধবার নবান্নে চিঠি পাঠিয়েছে আমলাদের এক সংগঠন। কমিশনের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে ডব্লিউবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। কমিশনের ওই নির্দেশকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করার জন্য মুখ্যসচিবকে অনুরোধ করেছে আমলাদের সংগঠন। চিঠিতে তারা জানিয়েছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পবিত্রতা এবং সততা বজায় রাখা যেমন প্রয়োজন, তেমনই এই ধরনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ন্যায্য ভাবে তা বিবেচনা করা উচিত।