হেনস্থার ভয়ে অটো নিয়ে গুরুগ্রাম থেকে মালদহে দুই ভাই
আনন্দবাজার | ০৬ আগস্ট ২০২৫
“রাস্তায় শুধু চা খেয়েছি। চোখের পাতা বুজতে দিইনি। বউ-বাচ্চাদের নিয়ে এ রাজ্যে যখন ঢুকলাম, মনে হল এ বার বিপদ কাটল,” বলছেন ইসরাইল মিয়াঁ এবং তাঁর ভাই আশরাফুল। দুই ভাইয়ের দাবি, হরিয়ানার গুরুগ্রামের যে এলাকায় তাঁরা থাকতেন, সেখানে বাংলা ভাষা শুনলেই ভিন্-দেশি বলে পুলিশ হয়রান করছে, এমন নানা কথা শোনা যাচ্ছিল। আশরাফুলের স্ত্রীর তরফে এক আত্মীয়কে তেমন ঝামেলায় পড়তেও হয়। তার উপরে ছিল ভাড়াবাড়ি খালি করার তাগাদা। সব মিলিয়ে গত ১ অগস্ট রাত থেকে দিনে-রাতে নাগাড়ে দু’টি অটো চালিয়ে হরিয়ানার গুরুগ্রামের ভাড়াবাড়ি থেকে সোমবার রাতে মালদহের গাজলের লক্ষ্মীপুরে ফিরেছে দু’টি পরিবার।
ইসরাইল মিয়াঁ ও তাঁর স্ত্রী রেশমা বিবি, ইসরাইলের ভাই আশরাফুল মিয়াঁ এবং তাঁর স্ত্রী সুখমণি কাজের সন্ধানে ১৬ বছর আগে গিয়েছিলেন গুরুগ্রামে। সেখানে সেক্টর ৪৯-এর ভাড়াবাড়িতে দু’টি ঘর নিয়ে সংসার পেতেছিলেন। দুই বউ ঠিকে পরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন। ইসরাইল ও তাঁর ভাই দিনমজুরি করে কিছু টাকা জমান। দু’টো অটো কিনে শুরু করেছিলেন চালানো। ইসরাইলের ন’বছরের, আশরাফুলের ছ’বছরের ছেলে আছে। সংসার ভালই চলছিল। কিন্তু দিন পনেরো আগে থেকে কানে আসতে শুরু করে, এলাকার বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ধরপাকড় করছে। বৈধ কাগজপত্র থাকলেও সুখমণির এক আত্মীয়ও ভিন্-দেশি সন্দেহে আটক হয়ে, পরে ছাড়া পান। ইসরাইলের দাবি, ‘‘ইতিমধ্যে বাড়িওয়ালা দ্রুত ঘর খালি করতে বলেন। আমাদেরও আধার কার্ড আছে। কিন্তু কখন পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করে, সে চিন্তা বাড়ছিল। তাই ঠিক করি, অটোয় চেপে বাড়ি ফিরব।’’
গত শুক্রবার রাতে শুরু হয় যাত্রা। আশরাফুল বলেন, ‘‘সমস্যায় পড়ার আশঙ্কায় পথে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিইনি। উত্তরপ্রদেশে নানা জায়গায় পুলিশ জেরা করেছে। কাগজপত্র দেখানোর পরেও দু’জায়গায় হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কোনও ভাবে এসেছি।’’
এত বছর পরে রাজ্যে এসে পথঘাট গুলিয়ে ফেলেন দু’ভাই। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে এসে পথ ভুলে দক্ষিণ দিনাজপুরে বুনিয়াদপুরে এসে পৌঁছয় তাঁদের অটো। বুনিয়াদপুর ট্র্যাফিক পুলিশের সাহায্য চান। তাঁদের কাছ থেকে সব শুনে পুলিশ তাঁদের পথ দেখিয়ে দেয়। সোমবার রাতে মালদহে ফেরে পরিযায়ী দুই পরিবার।
রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন,‘‘বিজেপি দেশ জুড়ে অস্থিরতা, ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। তাই মানুষ ভয়ে বিজেপিশাসিত রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলায় নিজের ঘরে ফিরছেন।’’ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘ওঁদের কথাতেই স্পষ্ট, যে ওঁদের সঙ্গে কেউ খারাপ আচরণ করেনি। যাঁদের বৈধ কাগজপত্র আছে তাদের সঙ্গে পুলিশ খারাপ ব্যবহার করেছে, এটা গুজব। তাতে আতঙ্কিত হয়ে ওঁরা এসেছেন। তবে এটাও ঠিক, এই কাগজপত্র যাচাইয়ের সময়ে অনেক বাংলাদেশি ধরা পড়েছে।’’
গুরুগ্রামে ফেরত যাবেন কি? দুই ভাই বলেন, ‘‘আগে পরিস্থিতি দেখি। পরে হয়তো ফিরতে হবে।’’