• BJP-কে রুখতে বুথ স্তরে বদলের নির্দেশ তৃণমূলে
    এই সময় | ০৬ আগস্ট ২০২৫
  • এই সময়: '২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের রোডম্যাপ ছকে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে যেমন একেবারে সংগঠনের নিচুতলা পর্যন্ত রদবদলের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি, তেমনই কোন কোন কর্মসূচি কী ভাবে পালন করতে হবে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

    মঙ্গলবার দলের বিভিন্ন স্তরের ন'হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে নিয়ে এই সাংগঠনিক বৈঠকে অভিষেকের নির্দেশ, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের যে বুথগুলিতে গেরুয়া শিবির ধারাবাহিক ভাবে একশোর বেশি ভোটে লিড পেয়েছে, সেই সব বুথের সভাপতি এবং বুথ লেভেল এজেন্টকে (বিএলএ) বদল করতে হবে। এই দুই ভোটের সময়ে রাজ্যে বুথের সংখ্যা ছিল ৮০ হাজারের বেশি। রাজ্যের প্রথম সারির এক সেফোলজিস্টের হিসেবে বলছে, গত লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবির প্রায় ২৬ হাজার বুথে কমবেশি লিড পেয়েছিল। তবে ভোট বিশ্লেষকদের অনেকেরই পর্যবেক্ষণ, ২০২১ এবং ২০২৪-এর দু'টি নির্বাচনেই বিজেপি একশোর বেশি ভোটে লিড পেয়েছে, এমন বুথের সংখ্যা ২৬ হাজারের অনেক কম।

    অভিষেক অবশ্য এই খামতিটুকুও রাখতে চাইছেন না। দুর্বল বুথগুলিতে সাংগঠনিক রদবদল করে শক্তিশালী করতে চাইছেন তিনি। আগামী বছরের বিধানসভা ভোটে রেকর্ড সাফল্যের লক্ষ্যে সংগঠন কোন পথে চলবে, অবিলম্বে কোন কোন সাংগঠনিক কাজ করতে হবে এবং কোন কর্মসূচি কী ভাবে সফল করতে হবে, তার রোডম্যাপ এ দিন ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটের এই ভার্চুয়াল বৈঠকে ব্যাখ্যা করেছেন অভিষেক। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের ময়দানে বুথ স্তরের সংগঠন সব সময়ে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে। ভোটার তালিকা সংশোধন মনিটর করা থেকে ভোট মেশিনারি কত সফল ভাবে কাজ করবে, তা নির্ভর করে বুথস্তরের সংগঠনের উপরেই।

    এ দিনের ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক যে সাংগঠনিক নির্দেশগুলি দিয়েছেন, তা মূলত বুথ স্তরের সংগঠনের দিকে তাকিয়েই বলে তৃণমূলের একাধিক নেতার পর্যবেক্ষণ। চলতি মাসেই রাজ্যে ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (সার) শুরু হওয়া নিয়ে জল্পনা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় কমিশনের বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) বড় ভূমিকা রয়েছে। এই বিএলও-রা নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছেন কি না, সে দিকে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। সূত্রের দাবি, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সব জনমুখী পরিষেবা দিচ্ছেন, কারও নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেলে তিনি কিন্তু তা পাবেন না। এটা মাথায় রাখবেন। বিজেপি এক কোটি নাম বাদ দেবে বলেছে। একজনের নাম বাদ গেলেও কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নেব। বিএলও-দের মধ্যে রন্ধ্রে রন্ধে সিপিএমের লোক রয়েছে। এঁদের সবাইকে চিহ্নিত করবেন।' এই সিপিএম মনোভাবাপন্ন বিএলও-রা যদি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শও দিয়েছেন অভিষেক।

    গত ফেব্রুয়ারি মাসে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের দলীয় সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থানের বাসিন্দার নাম তোলা হয়েছে। তৃণমূল এরপরে জেলায় জেলায় ভোটার তালিকা পরীক্ষার কাজ করেছে। এখন 'সার' শুরু হওয়ার মুখে অভিষেক দলীয় নেতৃত্বকে বলেছেন, 'ভুয়ো নাম যাতে ভোটার তালিকায় না-তোলা হয়, তা নজরে রাখতে হবে। কোথাও এই চেষ্টা হলে তা রুখতে হবে।' নির্বাচন কমিশন 'সার'-এর মাধ্যমে পিছনের দরজা দিয়ে এনআরসি চালুর চেষ্টা করছে বলেও নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছেন অভিষেক।

    ভিন রাজ্যে বাংলাভাষী নাগরিকদের আটক, নিগ্রহের ঘটনা থেকে শুরু করে বাংলার মানুষকে এনআরসি নোটিস পাঠানোর ঘটনাও ক্রমে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে পুজোর মরশুম শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত বুথ স্তরে টানা প্রচার কর্মসূচি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। সূত্রের দাবি, এ দিন তৃণমূলের নেতাদের তিনি বলেন, 'প্রতিটি বুথে চৌকি মিটিং করুন। ৩০-৪০ জন লোক থাকলেই হবে। মাইক না-থাকলেও হবে। বুথ ধরে ধরে পথসভা করুন। কী ভাবে বাংলা ভাষার উপরে, বাঙালির উপরে বিজেপি আক্রমণ নামিয়ে এনেছে, তা মানুষকে বোঝান। এর আগে মাছ, মাংস, ডিম খাওয়ার জন্য বাংলার উপরে আক্রমণ হয়েছিল। এ বার বাংলা ভাষার উপরে আক্রমণ করা হচ্ছে।' এই প্রেক্ষাপটে বিজেপি নেতাদের দেখলেই 'জয় বাংলা' স্লোগান দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অভিষেক।

    সূত্রের খবর, 'জয় বাংলা' স্লোগান শুনে শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি কী ভাবে গাড়ি থেকে নেমে পড়েছিলেন, তাঁর নাম না-করে সেই প্রসঙ্গ এ দিন তুলে ধরেন অভিষেক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান' প্রকল্প গত শনিবার থেকে শুরু হয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি বুথ এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। তৃণমূলের সাংসদ ও বিধায়কদের তাঁদের এলাকায় এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করার পরামর্শও দিয়েছেন জোড়াফুলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূলে নেতাদের বক্তব্য, বিধায়ক ও সাংসদের এর ফলে বুথে বুথে যেতে হবে। অভিষেকের কথায়, 'স্বাধীনতার পরে রাজ্যে কখনও এমন প্রকল্প হয়নি। এটা ঐতিহাসিক উদ্যোগ। সমস্ত সাংসদ ও বিধায়ক এতে অংশগ্রহণ করবেন।' 'আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান' নিয়ে ১০ মিনিটের একটি ভিডিয়ো এ দিন অভিষেকের ভার্চুয়াল বৈঠকে দেখানো হয়। আগামী দিনে প্রয়োজনে ফের এমন ভার্চুয়াল বৈঠক করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন অভিষেক।

  • Link to this news (এই সময়)