• ডাকঘর থেকে টাকা উধাও, পলাতক অভিযুক্ত পিওন
    এই সময় | ০৬ আগস্ট ২০২৫
  • এই সময়, খড়্গপুর: পিওনের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে সোমবার পোস্টমাস্টারকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ডাকঘরের বেশ কয়েকজন আমানতকারী। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার সাঁইথল ডাকঘরে ক্যাম্প করল ডাক বিভাগ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডাকঘরের আমানতকারীরা। এ দিন তাঁদের কয়েকজনের অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হয়েছে। ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে অ্যাকাউন্টগুলি খতিয়ে দেখা হয়েছে, তার মধ্যে কিছু অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া টাকার পরিমাণ ঠিক রয়েছে। আবার কিছু অ্যাকাউন্টে সব টাকা জমা পড়েনি। আজ, বুধবারেও ওই ডাকঘরে শিবির করা হবে।

    ডেবরা ব্লকের সাঁইথল ডাকঘরের পিওনের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠে। আমানতকারীদের একাংশের অভিযোগ, ওই ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার পারমিতা পালকে মাসে দু'-একবারের বেশি দেখা যেত না। ডাকঘর চালাতেন ডাক পিওন অমল দোলই। তিনিই ডাকঘরের একচ্ছত্র অধিপতি হওয়ার সুযোগ নিয়ে আমানতকারীদের টাকা নয়ছয় করেন। কারও টাকা নিয়েও তা জমা করেননি, আবার কাউকে পাশবই দেননি বলে অভিযোগ।

    সেই অভিযোগ তুলেই সোমবার সকাল থেকে পোস্টমাস্টারকে ঘেরাও করে রাখেন আমানতকারীরা। যদিও পিওন পলাতক। ডাকঘর ঘেরাওয়ের কথা শুনে হাজির হয় পুলিশ। কিন্তু গ্রামবাসীদের বুঝিয়েও দিনভর ঘেরাও তোলা যায়নি। অবশেষে স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিশু, নারী ও জনকল্যাণ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শান্তি টুডু ঘটনাস্থলে যান। মানুষকে বুঝিয়ে রাত ১২টা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘেরাওমুক্ত হন পোস্টমাস্টার। ঘেরাও তোলার সময়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, মঙ্গলবার গ্রামেই শিবির করে সবার অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হবে।

    মঙ্গলবার সকাল থেকেই ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে শিবির করা হয়। যাঁদের কাছে পাশবই ও টাকা জমা দেওয়ার রসিদ ছিল তাঁদের অ্যাকাউন্টে সঠিক টাকা জমা পড়েছে কি না, সে ব্যাপারে তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে যাঁদের পাশবই নেই, তাঁদের অ্যাকাউন্টের কোনও তথ্য এ দিন দেওয়া যায়নি। এই ধরনের আমানতকারীদের আধার কার্ড সংগ্রহ করেছে ডাক বিভাগ। যাতে সেই সমস্ত ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য জেনে আমানতকারীদের জানানো যায়। স্থায়ী আমানতকারীদের ক্ষেত্রেও এ দিন কোনও তথ্য জানানো যায়নি।

    স্থানীয় বাসিন্দা গঙ্গা শিট, অসীম জানা, ঝন্টু মাণ্ডি, শীতল দাসেরা বলেন, 'আমরা ডাক বিভাগের আধিকারিকদের কাছে দাবি জানিয়েছি, সমস্ত ব্যক্তির তথ্য জানাতে হবে। যাঁদের টাকা নয়ছয় হয়েছে তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পিওনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।' কর্মাধ্যক্ষ শান্তি টুডুর কথায়, 'সকলেই গরিব মানুষ। অনেক কষ্টের রোজগার থেকে টাকা বাঁচিয়ে সেই সঞ্চয় তাঁরা ডাকঘরে জমিয়েছেন। এখন অ্যাকাউন্টে টাকা নেই শুনে তাঁদের রাগ হওয়া খুব স্বাভাবিক। ডাক বিভাগকে জানিয়েছি, প্রত্যেক আমানতকারীর বিষয়টি সংবেদনশীলনতার সঙ্গে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে। আমরাও গরিব মানুষের পাশে রয়েছি।'

    এ ব্যাপারে মেদিনীপুর ডাক বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট অজয় বর্মন বলেন, 'শিবির করে আমানতকারীদের টাকা লেনদেনের বিষয়টি দেখা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে নয়ছয় হয়েছে বলে প্রমাণও মিলেছে। অভিযুক্ত ডাক পিওনের বিরুদ্ধে আমরা থানাতেও অভিযোগ জানিয়েছি। আমানতকারীরা যাতে কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে দিকে আমরা নজর রেখেই কাজ করছি।'

  • Link to this news (এই সময়)