• মমতার ঝাড়গ্রাম সফরের জন্য ৪৮ ঘণ্টা নজরবন্দি রামলাল
    এই সময় | ০৬ আগস্ট ২০২৫
  • বুদ্ধদেব বেরা, ঝাড়গ্রাম

    মুখ্যমন্ত্রীর ঝাড়গ্রাম সফরের আগে চোখে চোখে রাখা হচ্ছে রামলালকে। ৪৮ ঘণ্টার জন্য তাকে নজরবন্দি করা হয়েছে। তার সঙ্গে সঙ্গে ঘোরার জন্য এক বিট অফিসার-সহ ১৫ জনের টিমকে মোতায়েন করা হয়েছে।

    রামলাল হলো ঝাড়গ্রামের জনপ্রিয় সেই দাঁতাল হাতি। বেশিরভাগ সময়ে ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের ঝাড়গ্রাম ও লোধাশুলি রেঞ্জের অন্তর্গত জিতুশোল-শালবনি-গড় শালবনি-কলাবনি চত্বরে থাকে সে। রামলাল শান্ত স্বভাবের হাতি হলেও খাবারের প্রতি তার দুর্বলতা রয়েছে। খিদে পেলেই সে সটান দাঁড়িয়ে পড়ে ঝাড়গ্রাম-লোধাশুলি পাঁচ নম্বর রাজ্য সড়কের উপরে। দীর্ঘক্ষণ রাস্তা আটকে রেখে পথচলতি পণ্যবাহী লরি থেকে বস্তা বস্তা রেশনের চাল, আটা নামিয়ে সাবাড় করে দেয় সে। রাস্তার পাশে থাকা দোকানেও শুঁড় ঢুকিয়ে খাবার খোঁজে রামলাল। হানা দেয় জিতুশোলের আটা ও চাল মিলেও।

    পেট ভরলে দুলকি চালে ফের ওই রাস্তা ধরে জঙ্গলে ফিরে যায়। তার সৌজন্যে মাঝেমধ্যেই ওই রাস্তায় যানবাহন আটকে পড়ে। এই মুহূর্তে নিজের ডেরাতেই রয়েছে রামলাল। মঙ্গলবার সকাল থেকে লোধাশুলি রেঞ্জের আস্থাশুলি এলাকায় দেখা গিয়েছে রামলালকে। বিকেলে কলাবনির ক্যানালের কাছে ঝাড়গ্রাম-| লোধাগুলি রাস্তা পার করে জঙ্গলে ঢুকে যায় সে।

    এ দিকে, আজ, বুধবার, জাতীয় সড়ক ধরে লোধাশুলি হয়ে ঝাড়গ্রামে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। এই পথেই ফেরত যাওয়ার কথা তাঁর। মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রাপথে রামলাল যাতে বাগড়া না দেয়, সে যাতে পথ আটকে না দাঁড়ায়, তার জন্য চলছে তোড়জোড়। তার পিছন ছাড়তে নারাজ বনকর্মীরা। লোধাশুলি থেকে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত হাতি পারাপারের একাধিক করিডর রয়েছে। প্রতিটি করিডরে থাকছেন বন দপ্তরের কর্মী এবং হুলাপাটির সদস্যরা। ১২ জন রেঞ্জ অফিসার, বিট অফিসার এবং খোদ ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমামও থাকছেন। ডিএফও বলেন, 'রামলালের সঙ্গে ১৫ জনের একটি টিম নজরদারির জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। হাতির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য এডিএফও, ১২ জন রেঞ্জ অফিসার-সহ ১০০ জন বনকর্মীর একটি দল এবং এলিফ্যান্ট ট্র্যাকার ও মনিটরিং টিমের ১০০ জন মিলিয়ে ২০০ জন মোতায়েন করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সমস্ত দিক থেকে প্রস্তুত বন দপ্তর।'

    রামলালের পাশাপাশি বরিয়ার কাছে ২০টি হাতির একটি দলকেও নজরবন্দি করেছে বন দপ্তর। দলটির সঙ্গে রয়েছে বড় একটি হুলা পার্টি। বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, লোধাগুলি থেকে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত জিতুশোল, শালবনি, কলাবনি, বাঁদরভুলা এবং জামবনি মোড় হাতির করিডরে ঐরাবত সমেত বন দপ্তরের গাড়ি মোতায়েন থাকবে। পাঁচটি গাড়িতে বনকর্মীরা টহলদারি চালাবেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫টি গাড়ি বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন থাকছে। বন দপ্তর তিনটি স্তরে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছে। প্রথমত, হাতির গতিবিধি মনিটারিং-এর জন্য কর্মী মোতায়েন। দ্বিতীয়ত, হাতির করিডরগুলিতে ঐরাবত গাড়ি সমেত বনকর্মীদের টহলদারি। তৃতীয়ত, পরিস্থিতি হাতের বাইরে গেলে হাতিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে কাবু করার জন্য বিশেষ দল মোতায়েন।

    মঙ্গলবার বিকেলে বাঁদরভুলা বিট অফিসে দলকে নিয়ে মহড়া করেন ডিএফও। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় আসা পুলিশকর্মীরাও যাতে প্রতি মুহূর্তে হাতির অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেন, তার জন্য বন দপ্তর ও পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছে। হনুমান ও সাপ উদ্ধারে ১৫ জনের একটি টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)