নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ধারাবাহিক ট্রাফিক সচেতনতার পরেও পূর্ব মেদিনীপুরে পথ দুর্ঘটনায় রাশ টানা যাচ্ছে না। প্রতি মাসে জেলায় গড়ে ৭০টি দুর্ঘটনা ঘটছে। তাতে ৪২জনের মৃত্যু হচ্ছে ও ৫০ জনের বেশি জখম হচ্ছেন। এই অবস্থায় কোলাঘাট থেকে দীঘা পর্যন্ত দু’টি জাতীয় সড়ক বরাবর আট জায়গায় ‘নাইট নাকা চেকিং’ চালানোর সিদ্ধান্ত নিল জেলার ট্রাফিক পুলিস। দীঘা বাইপাস, চাউলখোলা, কাঁথি, মারিশদা বাজার, চণ্ডীপুর, শ্রীধরপুর, নিমতৌড়ি ও কোলাঘাটের হলদিয়া মোড়ে রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত নাইট নাকা চলবে। এছাড়াও ট্রাফিক পুলিসের সুবিধার জন্য ১০টি বুলেট বাইক দেওয়া হবে।
অতিরিক্ত পুলিস সুপার(ট্রাফিক) শ্যামলকুমার মণ্ডল বলেন, ধারাবাহিক সচেতনতা ও পরিকাঠামোয় জোর দেওয়া সত্ত্বেও দুর্ঘটনা কমছে না। এটা আমাদের কাছে খুবই চিন্তার বিষয়। সাধারণত, রাত ১০টায় আমাদের ট্রাফিক পুলিসের ডিউটি শেষ হয়। কিন্তু, উত্তরোত্তর দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে আমরা জেলার আটটি জায়গায় ‘নাইট নাকার’ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দ্রুত সেটা চালু হবে।
গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ৪১৮টি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারমধ্যে ২৩৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ওই সব দুর্ঘটনায় মোট ২৫৪জন মারা গিয়েছেন। এছাড়া ৩২৯জন জখম হয়েছেন। গড়ে প্রতি মাসে ৭০টি দুর্ঘটনা ঘটছে। তাতে মারা যাচ্ছেন ৪২জন। জানা গিয়েছে, গত ছ’মাসে এই জেলায় জাতীয় সড়কে ৯০জন, রাজ্য সড়কে ৩১জন এবং অন্যান্য সড়কে আরও ১১৭জন পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
২০২২সালে এই জেলায় ৭৫১টি দুর্ঘটনায় ৪৫৫জন মারা গিয়েছেন। জখম হয়েছেন আরও ৫৬৪জন। ২০২৩সালে ৭৯৪টি পথ দুর্ঘটনায় ৪৯১জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন আরও ৫৯০জন। তাঁদের অনেকের অঙ্গহানি হয়েছে। ২০২৪সালে পূর্ব মেদিনীপুরে মোট ৮২২টি পথ দুর্ঘটনায় ৪৭৩জনের প্রাণহানি হয়েছে। জখম হয়েছেন ৬২৩জন। পথ দুর্ঘটনার নিরিখে প্রথম সারির জেলার মধ্যে পড়ে পূর্ব মেদিনীপুর। ট্রাফিক বিভাগকে ঢেলে সাজানোর পরও দুর্ঘটনায় রাশ টানা যাচ্ছে না। আগে এই জেলায় একজন ডিএসপি(ট্রাফিক) ছিলেন। পরবর্তীতে কাজের সুবিধার জন্য ট্রাফিক বিভাগে দু’টি ডিএসপি পদ তৈরি হয়। গত বছর থেকে অতিরিক্ত পুলিস সুপার(ট্রাফিক) পদ তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকার অনুমোদিত তিনটি ট্রাফিক গার্ড(টিজি) কোলাঘাট হাইওয়ে, তমলুক ও কাঁথি থাকলেও তাদের অধীনে আরও ১৪টি সাব ট্রাফিক গার্ড গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি সাব ট্রাফিক গার্ডের মাথায় একজন করে সাব ইন্সপেক্টর কিংবা অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর আছেন। এছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম, মার্কিং, গতি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বোর্ড সহ পরিকাঠামোয় জোর দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা আটকানোর জন্য এতকিছু উদ্যোগের পরও নিটফল জিরো। কারণ দুর্ঘটনায় রাশ টানা যাচ্ছে না।
এই জেলায় ৮৩টি ব্ল্যাক স্পট ও ৯৫টি দুর্ঘটনাপ্রবণ জোন রয়েছে। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ওইসব জায়গায় প্রায়ই ভিজিট করে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য নানারকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনা বৃদ্ধির একটা মস্ত বড় কারণ হল, প্রচুর সংখ্যক যানবাহন বেড়ে যাওয়া। জেলা পুলিসের হিসেব অনুযায়ী, ২০২২সালে তমলুক থানার সোনাপেত্যা টোলপ্লাজা দিয়ে ৩৭লক্ষ ৫০হাজার ৮৯৮গাড়ি পারাপার করেছে। ২০২৩সালে সংখ্যাটা ছিল ৩৬লক্ষ ৯৯হাজার ৫৮৫। গত বছর সেই সংখ্যাটা বেড়ে ৩৮লক্ষ ৩২হাজার ৬৭৯টিতে দাঁড়ায়।-নিজস্ব চিত্র