নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে বেওয়ারিশ গোরুর বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে নামল পুরুলিয়া পুরসভা ও টাউন থানার পুলিস। দাবিদারহীন প্রায় ৪২টি গোরুকে গাড়িতে চাপিয়ে শহর সংলগ্ন সিংবাজারের গৌরক্ষণীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে, সেখানে রাখতে গেলে গোরু পিছু একশ টাকা লাগে। এই খরচ কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে চিন্তায় পুরসভা! যদিও চেয়ারম্যান নবেন্দু মাহালির দাবি, পুর আইন অনুযায়ী গোরুগুলিকে নিলামে তোলা হবে। সেই টাকা থেকেই খরচ মেটানো হবে।
পুরুলিয়া শহরের রাস্তাঘাটে গোরু আর ষাঁড়ের দাপটে কার্যত অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বাসিন্দারা। সকাল থেকে রাত— শহরের প্রতিটি ব্যস্ততম রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে গোরু, ষাঁড়। মর্জি হলেই দলবেঁধে রাস্তার মাঝে বসে পড়ছে। তাড়া দিলেও সরছে না। যার জেরে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পথচলতি মানুষদের। শহরের ব্যস্ত রাস্তাতে যানজট হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রাস্তার ধারে ফল, ফুল, কিংবা সব্জি বিক্রেতাদের। গোরু এসে প্রায়শই তাঁদের পণ্য খেয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া, প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় যে শুধু মানুষ জখম হচ্ছে, এমনটা নয়। অনেকক্ষেত্রে গোরুগুলিও চোট পাচ্ছে। পুরসভার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছিলেন বাসিন্দারা। তারপরেই এই অভিযান।
তবে, এরকম অভিযান এই প্রথম নয়। প্রতি বছরই এরকম ‘লোক দেখানো’ অভিযান করে পুরসভা। গত বছর পুজোর সময়ও অভিযান করেছিল পুরসভা। যদিও তাতে পরিস্থিতির উন্নতি কিছুই হয়নি। শহরে গোরুর সমস্যার সমাধানে খোঁয়াড় তৈরি করবে বলেও একবার উদ্যোগী হয়েছিল পুরসভা। যদিও তা বিশ বাঁও জলে। এক পুর আধিকারিক মনে করাচ্ছেন, এর আগেও অভিযানে নেমে একাধিক গোরু পাকড়াও করে গোশালাতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু গোশালা থেকে প্রতি মাসে মোটা টাকা বিল পাঠাতে শুরু করে। যদিও এর জন্য আলাদা করে কোনও বরাদ্দ না থাকায় সেখানে কয়েক লক্ষ টাকা বকেয়া আছে পুরসভার। এবার গোরু নিলাম করে সেই অর্থ মেটানো হবে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান।
সোমবার রাতে অভিযান নিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, গোরুকে রাস্তা থেকে তুলে সুরক্ষিত জায়গায় রাখতে গেলে খরচ আছে। একেকটি গোরু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একশ টাকা করে খরচ হয়। এই বিপুল খরচ মেটানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু জনগণের দাবিই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড়। সেই কারণেই ফের আমরা অভিযানে নামতে বাধ্য হয়েছি। বাজেয়াপ্ত গোরুগুলিকে কিছুদিন রাখা হবে। মালিকদের যদি পাওয়া যায়, তাহলে মোটা টাকা জরিমানা করা হবে। না পাওয়া গেলে গোরুগুলি নিলামে তোলা হবে। এবার থেকে এই অভিযান নিয়মিত চলতে থাকবে। পুরসভার এই ‘অ্যাকশন’-এ খুশি শহরের বাসিন্দারা।