• বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে নদী, আতঙ্ক, মানিকচকের গ্রামে ক্রমশ এগিয়ে আসছে গঙ্গা, গিলছে জমি-বাড়ি
    বর্তমান | ০৬ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, মানিকচক: মানিকচকে একদিনে গঙ্গা নদীর জলস্তর বাড়ল ২১ সেমি। ফলে বিপদসীমা থেকে ২২ সেমি’র উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা। অন্যদিকে, নারায়ণপুর চরে দু’দিন ধরে চলছে ব্যাপক ভাঙন। গিলছে জমি-বাড়ি। ভয়ে বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র পালাচ্ছেন স্থানীয়রা। দিশেহারা দশা নদী পাড়ের বাসিন্দাদের। তারমধ্যে প্রশাসনের পাঠানো নলকূপ ও শৌচাগার তৈরির সামগ্রী লুট করল চরের বাসিন্দারা। অভিযোগ, পর্যাপ্ত পরিমাণ সামগ্রী না পাঠানোয় ক্ষিপ্ত গ্রামবাসী জিনিসগুলি আটক করেছেন। ঘটনায় মানিকচক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ঠিকাদার।

    মানিকচকে কয়েকদিন ধরে লাগাতার বাড়ছে গঙ্গার জলস্তর। পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যাপক পাড় ভাঙন। রতুয়ার পশ্চিম রতনপুর, মানিকচকের গোপালপুরের সঙ্গে এবার নারায়ণপুর চরে দু’দিন ধরে ভাঙন চলছে। বিঘার পর বিঘা জমি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। তাই বাড়ির প্রয়োজনীয় সামগ্রী সহ বাড়ির সামগ্রী খুলে নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। কেউ মানিকচক কেউবা ঝাড়খণ্ডে যাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, এখানে ভাঙন রোধে কোনও কাজ হয় না। তাই এখানে বসবাসকারী দুই শতাধিক পরিবার বাড়িঘর ভাঙতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ললিত চৌধুরী বলেন, চরে প্রথমে ৬০০ পরিবার থাকলেও বর্তমানে ২৫টি পরিবার বসবাস করে। প্রতিবছর ভাঙনে গ্রামের আয়তন ছোট হচ্ছে। আমরাও এবার বাড়ি ভাঙছি। কোথায় যাব, তা জানা নেই। সরকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক। 

    একইভাবে রতুয়া-১ ব্লকের পশ্চিম রতনপুরেও সকাল থেকে শুরু হয়েছে ভাঙন। ফলে বাঁশের খাঁচার মাধ্যমে ভাঙন রোধের কাজ সম্পূর্ণ তলিয়েছে নদীগর্ভে। বাঁধ থেকে ৪০ মিটার দূরে রয়েছে নদী। পাশাপাশি গোপালপুরের কামালতিপুর, ঈশ্বরটোলা এবং উত্তর এবং দক্ষিণ হুকুমতটোলায় চলছে ভাঙন। প্রতি জায়গায় বালির বস্তার মাধ্যমে ভাঙন রোধের কাজ জোরকদমে চালাচ্ছে সেচদপ্তর।

    অন্যদিকে, গঙ্গার জল বৃদ্ধিতে পানীয় জল ও শৌচাগারের সমস্যা দেখা দিয়েছে নারায়ণপুর চরে। সমস্যা মেটাতে ব্লক প্রশাসন নলকূপ এবং শৌচাগার তৈরির ব্যবস্থা করছে। অভিযোগ, সোমবার ঠিকাদার সংস্থা নলকূপ ও শৌচাগারের কাজ করতে নৌকা করে গেলে তাদের ঘিরে ধরেন স্থানীয়রা। নৌকা থেকে সামগ্রী নামানো মাত্রই লুট করে নেয় গ্রামবাসীরা। এবিষয়ে সংস্থার পক্ষে শরিফুল হক বলেন, আমরা গেলেই প্রথমে কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমাদের কাছে থাকা নলকূপ, পাইপ, শৌচাগার তৈরির সিমেন্ট, বালি সমস্ত লুট করে নেয়। আমাদের শ্রমিকদেরও মারধর করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা উত্তম চৌধুরী বলেন, গ্রামের পাঁচটি উঁচু জায়গায় প্রশাসন নলকূপ ও শৌচাগার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু বেশকিছু উত্তেজিত জনতা আরও বেশি  সংখ্যক নলকূপ ও শৌচাগারের দাবি তোলে। সেইমতো কাজ না হওয়ায় গ্রামবাসীরা সামগ্রীগুলি আটক করেন।

    এঘটনায় ইতিমধ্যে ঠিকাদারের পক্ষ থেকে মানিকচক থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে মানিকচক থানার পুলিস।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)