আইন ভাঙার অভিযোগ, কিঞ্জল -সহ কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তারকে বৌবাজার, হেয়ার স্ট্রিট থানায় তলব
আনন্দবাজার | ০৫ আগস্ট ২০২৫
আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রতিবাদে অনশন কর্মসূচিতে আইন ভাঙার অভিযোগে এ বার কিঞ্জল নন্দ-সহ বেশ কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তার এবং ডাক্তারি পড়ুয়াকে তলব করল বৌবাজার এবং হেয়ার স্ট্রিট থানা। ২০২৪ সালে অনশন কর্মসূচি চলাকালীন জুনিয়র ডাক্তারেরা বিভিন্ন আইন ভাঙেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এ বার তলব করা হল কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তারকে। তাঁদের যে নোটিস পাঠানো হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের কাছে এমনটাই জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
চিকিৎসক দেবাশিস হালদার সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘গত ৩-৪ দিন ধরে লক্ষ্য করছি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর-সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, ইন্টার্ন, পড়ুয়াদের কাছে পুলিশের নোটিস যাচ্ছে। আমরা যা জানতে পেরেছি, এখনও পর্যন্ত সংখ্যাটা ছয়। তবে সংখ্যাটা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।’’ দেবাশিস আরও জানান, গত বছর ধর্মতলায় অনশন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধারা দেওয়া হয়েছে। বেআইনি জমায়েত, পুলিশের কাজে বাধাদান, মহিলা পুলিশের শ্লীলতাহানি, পুলিশকে আঘাত ইত্যাদি অভিযোগে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলেও দাবি জুনিয়র ডাক্তারদের। তবে এ ভাবে ভয় দেখিয়ে আন্দোলনকে দমন করা যাবে না বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসক দেবাশিস।
সংশ্লিষ্ট জুনিয়র ডাক্তার এবং ডাক্তারি পড়ুয়াদের কাছে নোটিস পাঠানো হয়েছে ওই দুই থানা থেকে। কিঞ্জল ছাড়াও নোটিস পেয়েছেন চিকিৎসক অরিন্দম ঘোষ, অনিন্দ্যসুন্দর মণ্ডল, অঞ্জন মণ্ডল-সহ বেশ কয়েক জন। এই নোটিস প্রসঙ্গে আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ তথা চিকিৎসক অনিকেত মণ্ডল প্রশ্ন তুলেছেন, আইন যদি ভাঙা হয়েই থাকে, তা হলে এত দিন পর কেন নোটিস পাঠানো হচ্ছে? ১০ মাস পর হঠাৎ কেন এই পদক্ষেপ, তার কারণ জানানোর দাবি তুলেছেন অনিকেত। তাঁর পাল্টা জবাব, ‘‘প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমেই এর যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।’’ অনিকেত আরও প্রশ্ন তুলেছেন, যদি পুলিশ অফিসারের শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা ঘটে থাকে, তা হলে তার জন্য এত দিন পরে কেন নোটিস পাঠানো হল? এই ঘটনাকে ‘প্রতিহিংসামূলক’ আচরণ বলেও দাবি করেছেন অনিকেত। এ বিষয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, আরজি করের ঘটনার পর জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি দিয়ে শুরু হয়েছিল আন্দোলন। তার পরে লালবাজার অভিযান ঘিরে বৌবাজারে পুলিশি ব্যারিকেডের সামনে রাতভর অবস্থান। শেষমেশ পুলিশের ‘পিছু হটা’। কলকাতা পুলিশের তৎকালীন কমিশনারকে ‘প্রতীকী শিরদাঁড়া’ দিয়ে আসা দাবিসনদ-সমেত। তারও পরে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে টানা অবস্থান। সেখানে আচম্বিতে পৌঁছে যাওয়া মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে নবান্নে বৈঠক এবং ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ না-হওয়ায় সেই বৈঠক শুরুই না-হওয়া। পরে আবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠক। সেই একই সরাসরি সম্প্রচার নিয়ে স্নায়ুর যুদ্ধে সেই বৈঠকও ভেস্তে যাওয়া। পরে সম্প্রচার ছাড়াই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠক। সেখানে সরকারের খানিকটা পিছু হটা। অতঃপর স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান তুলে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি আংশিক প্রত্যাহার। সেখানেই শেষ হতে পারত ঘটনাপ্রবাহ। কিন্তু হয়নি। সাগর দত্ত হাসপাতালে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় আবার কর্মবিরতি শুরু হয়েছিল। তার পরে কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হলেও ধর্মতলায় চলে ‘আমরণ অনশন’। পুজোর মধ্যেও সেই কর্মসূচি চলেছে। অসুস্থ হয়ে পড়েন একের পর এক অনশনকারী। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত ২১ অক্টোবর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী-সহ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর অনশন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।