• টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন বেশ কিছু জেলা! নৌকায় চেপে স্কুলে যাচ্ছে পড়ুয়ারা, কোথাও বিধায়ককে ঘিরে বিক্ষোভ
    আনন্দবাজার | ০৫ আগস্ট ২০২৫
  • গত এক মাস ধরে প্রায় টানা বৃষ্টি চলছে রাজ্যে। কখনও ঘূর্ণাবর্ত, কখনও নিম্নচাপের কারণে বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। সেই কারণে জলমগ্ন রাজ্যের বেশ কিছু এলাকা। এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বহু স্কুল বন্ধ। যেগুলি খোলা, সেখানে ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা। কৃষিজমিতেও ঢুকেছে জল। বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। কিছু এলাকায় স্থানীয়েরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কোথাও বিধায়কের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

    পশ্চিম মেদিনীপুর

    জলমগ্ন ঘাটাল-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকা। সেই ঘাটালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, দিনের পর দিন যাচ্ছে, রাস্তাঘাটে জমা জল নামছে না। এর ফলে বন্ধ বেশ কয়েকটি স্কুল। যদিও কিছু এলাকায় স্কুল খোলা রয়েছে। সেই সব স্কুলে নৌকা চড়ে ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে পড়ুায়ারা। ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস জানিয়েছেন, জলমগ্ন এলাকার পডুয়াদের যাতে পরীক্ষায় বসতে কোনও সমস্যা না হয়, সে বিষয় নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।

    হাওড়া

    একটানা ভারী বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন ডোমজুড়ের সলপ এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। এলাকার নিকাশিব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ফলে রাস্তায়, ঘরে একহাঁটু করে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে ওই জল ভেঙে যাতায়াত করছেন। তাঁদের অভিযোগ, বিধায়ক কল্যাণ ঘোষকে বারবার জানালেও কাজ কিছুই হয়নি। তিনি ওই এলাকাতেই থাকেন। সলপ-১ পঞ্চায়েত থেকেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। মঙ্গলবার স্থানীয়দের একাংশ বিধায়কের বাড়ির সামনে জড়ো হন। তৃণমূল বিধায়কের নিদান, ‘‘ভগবানকে ডাকুন, বৃষ্টি থামলে জল নামবে। কারও বাবার ক্ষমতা নেই জল নামানোর।’’ ক্ষোভ জানিয়ে কিছু ক্ষণ পথ অবরোধ করেন স্থানীয়দের একাংশ।

    এই নিয়ে বিধায়ককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘চাষের নিচু জমি কিনে ওরা ঘর বানিয়েছে। তাই ওই এলাকায় জল জমে। প্রবল বৃষ্টিতে গোটা রাজ্যের মতো সলপেও জল জমেছে। খাল দিয়ে জল বার করার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে বৃষ্টি না থামলে কিছু করা যাবে না।’’ এই নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধী বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রায় বলেন, ‘‘যে বিধায়ক বলেন ঈশ্বরকে ডাকুন, তিনি জমা জল সরাতে পারবেন না। তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। তাঁর এক দিনও জনপ্রতিনিধি থাকার কোনও অধিকার নেই।’’

    হুগলি

    টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গিয়েছে চাষের জমি। মুখ্যমন্ত্রী যে রাস্তা দিয়ে আরামবাগ গিয়েছেন, সেখানে বিক্ষোভ দেখানোর হুঁশিয়ারি দেন গ্রামবাসীরা। অন্য দিকে, হরিপালের বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে খালের বাঁধ কেটে চাষের জমিতে জল ঢোকানো হয়েছে। ডাকাতিয়া খালের বাঁধ কেটে দেওয়ার ফলে হরিপালের সহদেব পঞ্চায়েতের পার্বতীপুরের খাঁ পাড়া-সহ কয়েক হাজার বিঘা জমি জলের নীচে রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে জমিতে জল ঢুকছে দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এলাকার মানুষ। তাঁরা ডানকুনি-আরামবাগ ২৬ নম্বর রোডে এসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় পুলিশ। বিডিও পারমিতা ঘোষও সেখানে পৌঁছোন। বিডিও পুরো বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তার পরে এলাকার মানুষ অবরোধ তুলে নেন।

    উত্তর ২৪ পরগনা

    বারাসত পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডে জলযন্ত্রণার সম্মুখীন বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের একাংশ পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় বারাসত থানার পুলিশ। পৌঁছোন বারাসত পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের পুরমাতা শিল্পী দাস। এলাকাবাসীদের একাংশের দাবি, জল নিকাশির ব্যবস্থা না-করলে তাঁরা অবরোধ তুলবেন না। তাঁদের অভিযোগ, বারাসত-ব্যারাকপুর রাস্তার ধারে একাধিক বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। এর ফলে নিকাশির সমস্যা হচ্ছে। এলাকার মানুষদের পাশাপাশি অবৈধ নির্মাণকারীদের ইতিমধ্যেই পুরসভার পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে বলে খবর। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)