‘আর সইব না, এ বার অ্যাকশন হবে’! ঘাটাল থেকে নয়া ‘প্ল্যান’ ঘোষণা মমতার, বললেন, ‘ভোটের পরেই হবে ব্যবস্থা’
আনন্দবাজার | ০৫ আগস্ট ২০২৫
ঘাটাল-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অংশ বন্যার জলে প্লাবিত। সেই বন্যাকবলিত ঘাটালের পরিস্থিতি মঙ্গলবার ঘুরে দেখলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন প্রতি বার বর্ষার সময় জলযন্ত্রণায় ভুগতে হয় ঘাটালকে, সেই কথা বলতে গিয়ে আবার এক বার কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং ডিভিসিকে দায়ী করলেন তিনি। তার পরেই হুঁশিয়ারির সুরে জানান, ‘অ্যাকশন’ হবে! বন্যা পরিস্থিতি কী ভাবে মোকাবিলা করা যায়, তারও রূপরেখা দেন মমতা। ঘাটাল থেকেই নতুন পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই পরিকল্পনা শুরু হবে।
চারপাশ জল থইথই করছে। শুধু অলিগলি নয়, ঘাটালের অনেক বড় রাস্তাও জলের তলায়। তেমনই এক জলমগ্ন এলাকায় জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। পাশে ছিলেন তৃণমূলের তারকা-সাংসদ দেব, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি এবং পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। মমতার অভিযোগ, ‘‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কেন্দ্র কিছু করেনি। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে এই প্ল্যানের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।’’ তিনি এ-ও জানান, বর্ষার পর থেকে কাজ শুরু হয়ে যাবে।
ঘাটালের পরিস্থিতি দেখে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলা নদীমাতৃক দেশ, নেপালে বৃষ্টি হলে উত্তরবঙ্গ ভেসে যায়। আর ডিভিসি, পাঞ্চেত, মাইথন থেকে জল ছাড়া হলে প্লাবিত হয় দক্ষিণবঙ্গ।’’ এ ভাবে বন্যা হলে যেমন মানুষের ক্ষতি হয়, তেমনই রাজ্যের কোষাগার থেকেও প্রচুর টাকা খরচ হয় বলে জানান মমতা। তবে তিনি এ-ও মনে করেন, মানুষের অসুবিধাই অগ্রাধিকার পাবে। বন্যা বা জল জমার মতো সমস্যার মোকাবিলা করতে তাঁর সরকার পাঁচ লক্ষ পুকুর কাটিয়েছে বলেও জানান মমতা। যদিও তার পরেও কোথাও কোথাও জলে ভাসছে। তা নিয়ে আক্ষেপের পাশাপাশি সরাসরি ডিভিসিকে দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার ডিভিসি যা জল ছেড়েছে, তা সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। কেন তারা ড্রেজ়িং করে না?’’ মমতার দাবি, ডিভিসি কর্তৃপক্ষ যদি ড্রেজ়িং করাতেন, তবে আরও ১০ হাজার কিউসেক মেট্রিক টন জলধারণের ক্ষমতা বাড়তে পারে।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘২০ বছর ধরে ডিভিসি ড্রেজ়িং করেনি। বর্ষা হলেই জল ছেড়ে দেয় ডিভিসি। ভাবে না এক বারও।’’ তার পরেই মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘এই অত্যাচার আর সহ্য করব না। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে ব্যবস্থা হবে। ডিভিসি জল ছাড়লে, তা কী ভাবে আটকানো যায়, তার পরিকল্পনা করব। প্রয়োজনে কিছু বাঁধ তৈরি করব, তা দিয়ে জল আটকানো হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বন্যা হলে বিহার, অসমের মতো বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি কেন্দ্রের থেকে সাহায্য পায়। কিন্তু বাংলা সব সময়েই বঞ্চিত। বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে, এমনও দাবি করেন মমতা।
দিনকয়েক আগেই বন্যা পরিস্থিতি এবং অন্য নানা কারণ নিয়ে নিজের সংসদীয় এলাকা ঘাটালে প্রশাসনিক বৈঠক করেন দেব। সেই বৈঠকের পর তিনি জানিয়েছিলেন, ঘাটালে বন্যার কারণ অতিবৃষ্টি এবং ডিভিসির অতিরিক্ত জল ছাড়া। তিনি এ-ও দাবি করেছিলেন, প্রশাসন যে ভাবে কর্মদক্ষতা দেখিয়েছে, তাতে এ পর্যন্ত বড় কোনও অভিযোগ আসেনি। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘাটালের জলমগ্ন এলাকা ঘুরে দেখেন দেবও।