• ‘বন বাঁচে নারীর হাতে’! বাঘ দিবসে ম্যানগ্রোভ রক্ষার নতুন কর্মসূচির সামনের সারিতে ‘অর্ধেক আকাশ’
    আনন্দবাজার | ০৫ আগস্ট ২০২৫
  • ম্যানগ্রোভ আর তার না-মানুষী বাসিন্দাদের রক্ষায় নতুন আহ্বান শুনল সুন্দরবন— ‘বন বাঁচে, নারীর হাতে’। যার মূল বার্তা, বন টিকে থাকবে নারীর যত্নে, নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণে। বিশ্ব বাঘ দিবসে বন্যপ্রাণপ্রেমী সংস্থা ‘সোসাইটি ফর হেরিটেজ অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল রিসার্চেস’ (শের)-এর হাত ধরে সুন্দরবনে শুরু হয়েছে এই অভিনব উদ্যোগ।

    সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প লাগোয়া গ্রাম পাখিরালয়ে অবস্থিত শের-এর ‘কমিউনিটি রিসোর্স অ্যান্ড নলেজ সেন্টার’ থেকে বাঘবনে ওই অভিনব উদ্যোগের সূচনা হয়েছে। তার বার্তা— একটি গাছ মানে অনেক জীবন, আর নারীর হাতে গাছ মানে বন ও বাঘের ভবিষ্যৎ নিরাপদ। বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ ব্যাঘ্রভূমি সুন্দরবন। সেখানকার জীববৈচিত্র্যের অভিভাবক হল বাঘ। বাঘ থাকলে বন থাকে, বন থাকলে নদী-জল-জীবিকা সবই টিকে থাকে। সেই লক্ষ্যে ‘বন বাঁচে নারীর হাতে’ শীর্ষক এই সচেতনতা উদ্যোগের অংশ হিসেবে, জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের ৫০ জন নারীকে দু’টি আমগাছের চারা দেওয়া হয়। নিছক উপহার হিসেবে নয়, বরং একটি প্রতিশ্রুতি হিসেবে। যে প্রতিশ্রুতি বন ও বাঘের ভবিষ্যতের সঙ্গে তাঁদের অলিখিত সম্পর্ককে আরও একটু মজবুত করতে চেষ্টা করে।

    সংগঠনের কর্ণধার তথা রাজ্য বন্যপ্রাণ উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য জয়দীপ কুণ্ডুর কথায়, সুন্দরবনের মহিলারা শুধুই গৃহস্থালী করেন না। তাঁরা মাটি, জল, গাছের সঙ্গে প্রতি দিন জীবনের কাজ করেন। কর্মসূচিতে ব্যাখ্যা করা হয়, বাদাবন সংলগ্ন গ্রামের মহিলারা কী ভাবে মহিলারা বাদাবন ও বাঘ সংরক্ষণে সাহায্য করতে পারেন। তাঁরা কী ভাবে বাড়ির আশপাশে যে গাছপালা ও পশুপাখি আছে তাদের ক্ষতি না করে এবং তাদের বাঁচিয়ে রাখার কথা বলে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আন্দোলনের অংশীদার হতে পারেন।

    কর্মসূচির আলোচনাপর্বে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল — পরাগবাহীদের (পাখি, মৌমাছি, প্রজাপতি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ) ভূমিকাকে সামনে আনা। যারা বন ও কৃষিজমির স্বাস্থ্যেরক্ষায় অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করে। একটি আমগাছে ফুল ধরলে, তা পরাগবাহীদের আকর্ষণ করে। আর সেই পরাগমিলনকারী পতঙ্গেরা জঙ্গল ও গ্রামের অর্থকরী উদ্ভিদ, দুইয়েরই ‘রিজেনারেশন’-এ সাহায্য করে। শেরের সদস্যা সুচন্দ্রা কুণ্ডুর কথায় উঠে আসে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্কটকালে বনভূমি সংরক্ষণে পরাগবাহীদের গুরুত্ব। তিনি জানান, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার পরাগবাহীদের সংখ্যা হ্রাস করছে। পরাগবাহীদের অনুপস্থিতিতে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বাদাবনের পুরো খাদ্যশৃঙ্খল ও বাস্তুতন্ত্রের। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কৃষিক্ষেত্রে। নষ্ট হতে পারে প্রাকৃতিক ভারসাম্যে। যা বাঘ এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্বের সঙ্গেও ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)