ধৃত বাংলাদেশি মডেল শান্তা পালের অবৈধ নথি বানিয়ে দেওয়ার অভিযোগে এবার গ্রেফতার নৈহাটির এক যুবক। কলকাতা পুলিশের গুন্ডাদমন শাখা তাঁকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতের নাম সৌমিক দত্ত, বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। অভিযোগ, শান্তার পক্ষে ভুয়ো আধার ও ভোটার কার্ড তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন তিনিই।
সূত্রের খবর, বাংলাদেশের বরিশালের বাসিন্দা শান্তা পাল ২০২৩ সাল থেকে যাদবপুর সংলগ্ন বিক্রমগড়ে একটি ভাড়াবাড়িতে বসবাস করছিলেন। নিজেকে পেশাদার মডেল হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকলেও, তাঁর ভারতে বসবাসের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে পুলিশের একাধিক সূত্র। জানা যায়, বাংলাদেশে কয়েকটি বিজ্ঞাপন সংস্থার হয়ে কাজ করেছিলেন শান্তা। এমনকি কিছু সিনেমাতেও অভিনয় করেন বলে দাবি। ২০১৯ সালে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ারও তথ্য মিলেছে। ভারতে আসার পর শান্তা কখনও দক্ষিণের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন বলে জানান, আবার কখনও পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। কলকাতায় পর্যটকদের জন্য গাড়ি ভাড়ার ব্যবসাও শুরু করেন। এমনই একটি ব্যবসায়িক যোগাযোগের সূত্র ধরে পার্ক স্ট্রিটের এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হয় শান্তার। সেখান থেকেই সামনে আসে তাঁর পরিচয় ঘিরে বিভ্রান্তি।
তদন্তে উঠে আসে, শান্তা ভারতীয় ভুয়ো পরিচয়পত্র ব্যবহার করেই কলকাতায় বসবাস করছিলেন। এমনকি, তাঁর ভিসার মেয়াদ গত জুলাইতেই শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এরপরও কীভাবে তিনি এ রাজ্যে ছিলেন? পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে শান্তা দাবি করেছেন, পশ্চিমবঙ্গ শান্তিপূর্ণ, তাই এখানেই থাকতে ভালো লাগে। তিনি নিজেকে বিবাহিত বলেও দাবি করেন, যদিও সেই দাবির সত্যতা যাচাই চলছে। শান্তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ উদ্ধার করেছে একাধিক ভুয়ো নথি। তার মধ্যে রয়েছে একই আধার নম্বরযুক্ত দুটি কার্ড। একটি ঠিকানা কলকাতার, অন্যটি বর্ধমানের। এমনকি, তাঁর নামে বর্ধমানের একটি ভোটার কার্ডও পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ এখন খতিয়ে দেখছে, তিনি বর্ধমানেও আদৌ থেকেছেন কি না এবং কবে ও কীভাবে কলকাতায় চলে এসেছেন।
এত কিছু জাল নথি প্রস্তুতের পিছনে কারা ছিলেন, সেই সূত্রেই উঠে আসে সৌমিক দত্তের নাম। অভিযোগ, শান্তার পক্ষে ভুয়ো আধার ও ভোটার কার্ড তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন তিনিই। শান্তার নামে নেওয়া একটি ব্যাংক ঋণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের ধারণা, তিনি নিজের নামে না নিয়ে অন্য মাধ্যমে করেছিলেন। এই মুহূর্তে শান্তা ও সৌমিক দু’জনেই পুলিশের হেফাজতে। তদন্তকারীদের মূল লক্ষ্য এখন এই জাল নথি তৈরির পেছনে আরও কারা কারা যুক্ত ছিল এবং এর সঙ্গে কোনও বৃহত্তর চক্র জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা।