পাড়া সমাধানে দু’দিনে ১২০০ শিবির, যোগ দিলেন সাড়ে চার লক্ষ মানুষ
প্রতিদিন | ০৫ আগস্ট ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কলকাতায় দু’টি বুথ নিয়ে একটি করে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ শিবিরের প্রস্তুতি নিল পুরসভা। আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এই শিবির চলবে। পাড়ায় সমাধান পরিষেবার পাশাপাশি ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরও একইসঙ্গে বিভিন্ন ওয়ার্ডে চলবে। সোমবার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে এই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ২ আগস্ট থেকে কলকাতায় বিভিন্ন ওয়ার্ড-সহ গোটা রাজ্যেই ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ পরিষেবা শুরু হয়েছে। প্রথম থেকেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে কর্মসূচি। দ্বিতীয় দিনেও সকাল হতেই মানুষের ঢল প্রত্যেক শিবিরেই। নবান্নসূত্রে খবর, সোমবার রাজ্যজুড়ে ৫৯০টা ক্যাম্প হয়েছিল। ২.৫১ লক্ষ মানুষ তাতে যোগ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ শনি এবং সোমবার এই দু’দিনে ১২০০-র বেশি শিবির করা হল রাজ্যে। তাতে ৪.৫০ লক্ষ মানুষ যোগ দিয়েছেন। এতথ্য জানান মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ।
কেউ এলেন রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট বসানোর দাবি নিয়ে, কারও মুখে আবার বাজারে শৌচাগার তৈরি, স্থানীয় স্কুলবাড়ি মেরামতের দাবি। কেউ তো একেবারে নিজের এলাকার কতটা অংশের রাস্তা সংস্কার প্রয়োজন, তা ম্যাপিং করে নিয়ে এলেন। সরকারের তরফেও সমস্যা সমাধানে অভিনব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিছু শিবিরে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরাও কাজ করেছেন। অধিকাংশক্ষেত্রে পাড়ার গলি রাস্তা থেকে নিকাশি সংস্কার ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের বাড়তি জোগান চেয়ে যেমন মানুষ দরবার করেছেন তেমনই কেউ ব্যক্তিগত সমস্যার কথাও এসে জানিয়েছেন। যদিও শিবিরে থাকা সরকারি আধিকারিকরা তাঁদের জানিয়েছেন, কোন কোন সমস্যার সেখানে সমাধান করা হবে। মূলত ছোটখাটো সমস্যা সহজে সমাধান করতেই মুখ্যমন্ত্রীর এই কালজয়ী প্রকল্প। একেবারে মানুষের দরজায় পৌঁছে গেলেন সরকারি আধিকারিকরা। শুনলেন অভিযোগ, করলেন কিছু সমস্যার সমাধানও। বাকি সমস্যা নথিভুক্ত করে রাখা হল।
কলকাতায় প্রথম ধাপে ওয়ার্ডপিছু দুটি করে শিবির হওয়ার ঘোষণায় কাউন্সিলরদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ শুরু হয়। কারণ, ১৩ বুথের ছোট ওয়ার্ডে দু’টি শিবির মেনে নিলেও ৬০ বা ৬৪ বুথের মেগা ওয়ার্ডে কীভাবে পাড়ায় সমাধান সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন বিভাগীয় মেয়র পারিষদ মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিক বরো চেয়ারম্যান সাধারণ নাগরিকদের বুথপিছু ১০ লক্ষ উন্নয়নের ঘোষণার জেরে প্রত্যাশার কথা মেয়রকে জানান। মাত্র দু’টি ক্যাম্প নিয়ে কাউন্সিলরদের ক্ষোভের বিষয়টি সোমবার বিকেলে মেয়রকে বিস্তারিত জানান মিতালি। এর পরই মেয়র সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে গোটা বিষয় নিয়ে রিপোর্ট করেন। সঙ্গে সঙ্গে কলকাতায় দু’টি বুথ নিয়ে একটি করে পাড়ায় সমাধান শিবির করার নির্দেশ দেন। পুরসভার কমিশনার ধবল জৈন জানিয়েছেন, ‘‘কত বুথ নিয়ে শিবির হবে সেটা নাগরিকস্বার্থের কথা মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর ও পুরসভার ডেপুটি ম্যানেজার মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।”
যদি দুটি বুথ নিয়ে একটি ক্যাম্প হয়, সেক্ষেত্রে ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এএসআই, নিকাশি, রাস্তা, পানীয় জল, আলো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়াররা শিবিরে থাকবেন। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পাড়ায় সমাধান হবে। পরে দুয়ারে সরকার-এর শিবির বসবে। শিবির পরিচালনা করবেন সংশ্লিষ্ট বুথের নিরপেক্ষ নাগরিকরা। পুরসভার অফিসাররা জানান, মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন বুথপিছু ১০ লক্ষ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হবে এই শিবিরে।