এবার একটানা প্রায় পঞ্চাশ দিন বৃষ্টি হয়েছে। ফলে আউশ ও আমন ধানের চাষে রোয়ার কাজ অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছে। এই সমস্যায় সবচেয়ে বেশি চিন্তিত রাজ্যের খাদ্য ভাণ্ডার হিসাবে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলার চাষিরা। দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিতে এই জেলার বেশিরভাগ কৃষিজমিই কার্যত জলের তলায়। বিশেষ করে রায়না ব্লকের বেশ কয়েকটি এলাকায় বন্যার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সেখানে আর চাষ করা যাবে না। এমনটাই আশঙ্কা। রবিবার অবশ্য ওই এলাকার ত্রাণশিবিরে গিয়েছিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি সকলের হাতে শস্য বীমার ফর্ম দেন। একই সঙ্গে আশ্বস্ত করেন, তাঁদের সব রকমের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
রায়না, খন্ডঘোষ ব্লকের বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবারের বৃষ্টিতে। সেসব দেখে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সরাসরি ডিভিসি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আনেন। জল জমে থাকা বা বন্যার জন্য কেন্দ্রীয় জলসম্পদ দপ্তরের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন তিনি। বলেন, মুন্ডেশ্বরী নদী সংস্কার না হওয়ায় জন্যই ‘ব্যাক ফ্লো’ করছে। মাঠের জল নামতে না পারায় রায়নার মাধবডিহি, বড়বৈনান, আদমপুর, কামারগড়িয়া-সহ একাধিক গ্রাম ডুবে গিয়েছে। আর এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে খরিপের ধানচাষে। যদিও মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, জল নেমে যাবার পর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সব রকমের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
বর্তমানে যেসব এলাকায় ধান রোয়ার কাজ শেষ হয়েছিল সেই সব এলাকাতেও ডুবে গিয়েছে জমি। বেশিরভাগ চাষির দাবি, যেভাবে জমি ডুবে গিয়েছে তাতে জল নিকাশি হতে হতে চারা পচে যাবার সম্ভাবনা ষোলআনা। ফলে অনেকটাই ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছেন এই জেলার কৃষিজীবী মানুষজন। শনিবার থেকেই পূর্ব বর্ধমানের রায়নায় বেশ কয়েকটি এলাকায় জল ঢুকে গিয়েছে। ফলে সেখানকার জমিতে চাষ করা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কৃষিপ্রধান পূর্ব বর্ধমান জেলায় সবচেয়ে বেশি ধান ও আলু উৎপাদন হয়। এই দুই চাষের মধ্যে একটা সমন্বয় থাকে। ধান তোলার পর বেশিরভাগ জমি ব্যাবহার করা হয় আলু চাষের জন্য। এক্ষেত্রে এবার জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে একটানা বৃষ্টিতে ধানচাষ পিছিয়ে গিয়েছে। জুলাই মাসে পুরোপুরি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে জেলার ধান চাষের বেশিরভাগ এলাকার জমি জলে ডুবে গিয়েছে। রায়নার পাশাপাশি জামালপুর, খন্ডঘোষ, মেমারি, গলসি, কালনা, কাটোয়া, কেতুগ্রাম, আউশগ্রাম, গুসকরা সব এলাকাতেই জমি জলে ডুবে থাকার খবর মিলেছে। কোথাও কোথাও ধানের জমি কোমর পর্যন্ত জলে ডুবে আছে।
এই অবস্থায় নতুন করে ধান রোয়া পোঁতার কাজে নামতে পারছেন না চাষিরা। যাঁদের জমিতে আগেই ধান রোয়া হয়ে গিয়েছিল তাঁদের চিন্তা বেশি। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম এই কথা স্বীকার করেছেন। বিভিন্ন এলাকায় তিনি খোঁজ খবর করেন। পরে তিনি বলেন, যেভাবে জমি ডুবে আছে তাতে বীজতলা আবার নতুন করে করতে হবে। কারণ আগের বীজতলা আর কাজে লাগানো যাবে না। রোয়ার কাজও থমকে আছে। বিশেষ করে রায়না, খন্ডঘোষে বেশিরভাগ জমিতে সুগন্ধি ধানের চাষ হয়। এবার সেই ধান চাষে অনকটাই ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা।
জেলায় এবার আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার হেক্টরে। জেলা কৃষিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে বলা হচ্ছে ১০,৪১৫ হেক্টর ধানচাষের জমি মূলত জলের তলায়। একই সঙ্গে বলা হয়েছে শুক্রবার পর্যন্ত জেলার প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে রোয়ার কাজ হয়েছে। তবে এই হিসাবের সঙ্গে একমত হননি জেলার দক্ষিণ দামোদর লাগোয়া গ্রামগুলির চাষিরা। তাঁদের মতে যেভাবে জল রয়েছে তাতে ওই পরিমাণ জমিতে রোয়া পোঁতার কাজ হয়নি। তাঁদের মতে, চাষের কাজ দেরি হলে আলু চাষে দেরি হবে। দুবার করে বীজতলা হলে বাড়তি খরচ খরচা লাগবে। আবার যত দেরি হবে ফলনে মার খাবার সম্ভাবনা রয়েছে। সব নিয়ে শস্যভাণ্ডার পূর্ব বর্ধমানে এবার সঙ্কটে চাষিরা।