বঙ্গে আন্দোলন-বার্তা মমতার, ‘ডগবাবু’র পরে ‘সিএম কুমার’
আনন্দবাজার | ০৫ আগস্ট ২০২৫
বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই উত্তাপ বাড়ছে বাংলায়। নির্বাচন কমিশন এ রাজ্যেও এই প্রক্রিয়া শুরু করার আগে সাংগঠনিক ভাবে তৈরি থাকতে চাইছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার দলের সাংসদদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বার্তা দিয়েছেন, ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে নিজেদের এলাকা থেকে সংসদ পর্যন্ত ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। সংসদে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের অন্য শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রতিবাদ চলবে। দলের তরফে নির্বাচন কমিশনের সামনে ধর্না ও বিক্ষোভ কর্মসূচিও নেওয়া হবে।
খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরে বিহারে এখন আবেদন ও আপত্তি জানানোর পর্ব চলছে। তারই মধ্যে উঠছে নানা রকম বিতর্ক। কুকুর, ট্র্যাক্টরের পরে এ বার যেমন নিবাস শংসাপত্রের জন্য ( রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট) ‘সিএম কুমার’-এর আবেদন ভেসে উঠেছে! এসআইআর চলাকালীন ‘ডগবাবু’, ‘ডগেশবাবু’র নামে নিবাসী শংসাপত্র জারি হয়েছিল বিহারে। কমিশন অবশ্য জানিয়েছিল, ভোটার তালিকার গণনা-পত্রের সঙ্গে কেউ ওই শংসাপত্র জমা দেননি। এ বার মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নামে নিবাসী শংসাপত্রের আবেদন জমা পড়ায় গোল বেধেছে। মুজফ্ফরপুর জেলায় অনলাইন আবেদন ঝাড়াই-বাছই করতে গিয়ে সরকারি এক আধিকারিক মুখ্যমন্ত্রীর নামে ওই আবেদনপত্র দেখতে পেয়েছেন। ‘সিএম কুমারে’র আবেদনপত্রে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশেরই ছবি দেওয়া রয়েছে! মুজফ্ফরপুরের সরারিয়া থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই আধিকারিক। পুলিশ তদন্তে নেমেছে।
বিহারে খসড়া ভোটার তালিকায় বাদ গিয়েছে ৬৫ লক্ষের বেশি নাম। তার পরে তিন দিনে রাজ্য জুড়ে ১৯২৭ জন আপত্তি ও আবেদন জমা দিয়েছেন। তবে কোনও রাজনৈতিক দলের তরফে কোনও আপত্তি এখনও জমা পড়েনি বলে জানিয়েছে কমিশন। তালিকায় নাম তুলতে চেয়ে নবীন ভোটারদের আবেদন জমা পড়েছে ১০ হাজার ৯৭৭টি। একাধিক জেলায় বেশ কিছু বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় মৃত মানুষের নাম রয়ে যাওয়া, একই ভোটার পরিচয়পত্রের (এপিক) নম্বরে একাধিক নাম থাকা বা ভোটার হাজির থাকা সত্ত্বেও খসড়া তালিকায় নাম বাদ যাওয়ার অভিযোগ আসছে। তবে কোনও দলের বুথ লেভল এজেন্টই (বিএলএ) এই নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা করেননি। পাশাপাশি, সরকারি একটি সূত্রে তথ্য মিলছে, বিহারের মুসলিম-অধ্যুষিত পাঁচ জেলায় বাদ গিয়েছে ৯.৫ লক্ষ নাম। অন্য দিকে, শাসক এনডিএ-র প্রভাবাধীন বলে পরিচিত এলাকা থেকে বাদ গিয়েছে প্রায় ২১ লক্ষ নাম। তার মধ্যে সর্বাধিক পটনায়।
বিহারের উদাহরণ টেনে এ রাজ্যে এসআইআর শুরুর আগে শাসক তৃণমূলের উপরে চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গেও ভোট চুরি করার বিহার মডেল, ওখানে আরজেডি এখানে টিএমসি! বিহারের তেজস্বী যাদবের মতো পশ্চিমবঙ্গেও ডানকুনি পুরসভার পুর-প্রতিনিধি কবিরুল আলমের ভোটার তালিকায় দু’টি জায়গায় নাম জ্বলজ্বল করছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এ রাজ্যে নির্বাচন কমিশন এসআইআর-এর কাজ শুরু করতে পারে, এমন সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে এই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী আতঙ্কিত।’’ নিজের নাম ভোটার তালিকার দুই জায়গায় থাকার কথা মানছেন তৃণমূলের কবিরুল। তাঁর বক্তব্য, তাঁদের আদি বাড়ি ২০ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি ২০২২ সালে ভোটে জেতার পরে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি করেন এবং সেখানে ভোটার তালিকায় নাম তোলেন। কবিরুলের দাবি, ‘‘২০ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকা থেকে নাম বাতিলের আবেদন করা আছে। শুভেন্দু অধিকারীকে বলতে চাই, আমি ভারতীয় বাঙালি। তাতে গর্ববোধ করি।’’