• অসম সরকার নোটিস পাঠালে কেউ যাবেন না : অভিষেক
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৫ আগস্ট ২০২৫
  • গোড়া থেকে সমস্যার সমাধান, এটাই ‘অভিষেক-স্ট্রাটেজি’। বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কাজ প্রায় শেষ, এবার প্রস্তুতির পালা। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এবার জেলা ধরে ধরে দলীয় সংগঠনে নতুন চেহারা আনতে এবং সংগঠনকে ময়দানে নামাতে তৎপর হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কোন জেলা বিজেপির শক্ত ঘাঁটি কিংবা কোন জেলায় তৃণমূলের সংগঠন মজবুত, সেই দিকে কর্ণপাত করতেই চান না অভিষেক। তাঁর লক্ষ্য, ছাব্বিশের বড় পরীক্ষার আগে সমস্ত ‘হোমওয়ার্ক’ শেষ করা। তাই সুদূর উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ, একে একে প্রত্যেক জেলাকে নিয়েই সাংগঠনিক বৈঠকে বসতে চলেছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক। সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই বৈঠকে প্রথমেই তাঁর নজরে উত্তরবঙ্গ। এদিন কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বৈঠকে বসেন কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার জেলার নেতৃত্বর সঙ্গে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ-সহ দুই জেলার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। এদিনের বৈঠকে সাংগঠনিক বিষয় বাদেও গুরুত্ব পেল এনআরসি-আতঙ্ক। ক্যামাক স্ট্রিটের বৈঠক থেকে তাঁর সাফ নির্দেশ, ‘অসম সরকার নোটিস পাঠালে কেউ গ্রহণ করবেন না, কেউ যাবেন না।’

    উল্লেখ্য, বৈঠকে অভিষেকের কাছে দলের জেলা সভাপতিরা অভিযোগ করেন, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার নাম করে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলার মানুষকে লাগাতার ভয় দেখানো হচ্ছে। এনআরসি-র তালিকা পাঠানো হচ্ছে একের পর এক। যেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিজেপি বিধায়কদের পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়, এমন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি, অভিষেকের কাছে অভিযোগ অভিজিতের। এর প্রেক্ষিতে ক্ষোভপ্রকাশ করে অভিষেক সাফ জানিয়ে দেন, ‘রাজনৈতিকভাবেই বিজেপির এই অপচেষ্টা রুখতেই হবে। অসম সরকারের নোটিস কেউ গ্রহণ করবেন না। কোনও কাগজ দেখাবেন না। অসমেও যাবেন না, এটাই দলের স্ট্যান্ড।’ পাশাপাশি অসম সীমান্ত সংলগ্ন এই জেলায় বাংলা ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনকেও আরও জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন অভিষেক। বিজেপিকে নিশানা করে তাঁর মন্তব্য, ‘ভয় দেখিয়ে, জাতপাতের নামে বিভাজন করে ওরা কিছু করতে পারবে না।’ জানা গিয়েছে, বৈঠকে ব্লক স্তরে বেশ কিছু রদবদলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহ থেকেই জেলা ও ব্লক স্তরে সংগঠন পদাধিকারীদের নাম প্রকাশ করা হতে পারে। এদিনের বৈঠকে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। কীভাবে কাজ করা হবে, যাতে কেউ নিজ দায়িত্বে গাফিলতি না করেন, এহেন নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক।

    পাশাপাশি সাংগঠন মজবুত করতেও একরাশ পরামর্শ জেলা নেতৃত্বদের দিয়েছেন তিনি। উত্তরবঙ্গ বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত হলেও গত লোকসভা নির্বাচনে তার ব্যতিক্রমী ফলাফল পাওয়া যায়। দাপুটে বিজেপি নেতা নিশীথ প্রামাণিককে পরাস্ত করে প্রায় ৩৮ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। আগামী ভোটেও এই ফল ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূল। সেই লক্ষ্যে বৈঠকে অভিষেকের বার্তা, ‘কোচবিহারে লোকসভার ফল ধরে রাখতেই হবে। ব্লক ভিত্তিক প্রচারে আরও বেশি করে জোর দিতে হবে। সবাইকে সবার সঙ্গ দিয়ে চলতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও কাউকে ছাড়া হবে না। নিজের এলাকায় বেশি করে সময় কাটান। নিজেদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব রাখবেন না। পাড়ায় উপস্থিত থেকে বুঝবেন মানুষ কী চাইছে, সেই অসুবিধা দূর করতে হবে।’ পরবর্তীতে বৈঠক প্রসঙ্গে অভিজিত বলেন, ‘হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে দলের নির্দেশে জেলার ১৯ জায়গায় মঙ্গলবার প্রতিবাদ সভা হবে। আমরা সবটাই বিস্তারিত অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে জানিয়েছি, তিনিও যথাযথ পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। যে বা যারা দ্বন্দ্বের কথা বলছেন, তারা ফিতে দিয়ে মেপে দেখিয়ে দিক!’ জানা গিয়েছে, আগামী বুধবার মালদহ ও জলপাইগুড়ি, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দিনাজপুর ও জঙ্গিপুর এবং ১১ অগাস্ট উত্তর দিনাজপুর জেলা নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক করবেন অভিষেক।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)