‘কাজের লোক’! প্রতি সপ্তাহে নতুন যুবতী লিটনের ফ্ল্যাটে
বর্তমান | ০৫ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: ষাটোর্ধ্ব, মুখে সবসময় হাসি লেগে রয়েছে। অমায়িক ব্যবহার ও বয়সকে ঢাল করে নিত্যনতুন মেয়েকে ফ্ল্যাটে নিয়ে আসতেন রহড়ার অস্ত্রকাণ্ডে ধৃত মধুসূদন মুখোপাধ্যায়। আবাসনের বেশ কয়েকজন মানুষের চোখে দৃষ্টিকটু লেগেছিল বিষয়টি। তাঁরা এনিয়ে মধুসূদনকে প্রশ্নও করায় তিনি বলেছিলেন, এরা সব কাজের লোক। অনেক টাকা মাইনে দিলেও কেউ স্থায়ী হচ্ছে না। এনিয়ে খুব সমস্যায় আছি। ভালো কাউকে খুঁজছি। বয়স্ক মানুষের এই কথায় কেউ আর বিষয়টিকে নিয়ে খুব বেশি বাড়াতে চাননি। কিন্তু সোমবার সকালে আবাসনে পুলিসের হানা ও তাঁর ফ্ল্যাট থেকে অস্ত্র ভাণ্ডার উদ্ধারের পর ধীরে ধীরে মুখ খুলছেন ফ্ল্যাটের আবাসিকরা। মধুসূদনের আড়ালে তাঁদের মধ্যে এমন অস্ত্র কারবারি যে লুকিয়েছিল, তা ভেবেই তাজ্জব অনেকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছিল, রহড়ার রিজেন্ট পার্কের ওই আবাসনের গ্রাউন্ড ফ্লোরের ওই ফ্ল্যাটে মধুসূদন একা থাকলেও, প্রতি সপ্তাহেই বদলে যেত মহিলাদের মুখ। গত চার বছরে সেখানে কমবয়সি যুবতী থেকে মাঝ বয়সি বহু গৃহবধূকে দেখেছেন আবাসিকরা। কিন্তু কেউ থাকতেন আট দিন, কেউবা ১০ দিন। এছাড়া বহিরাগতদের আনাগোনা তো লেগেই ছিল। অস্ত্রকাণ্ডের তদন্তকারীরা মনে করছেন, এমনিতেই একতলার ওই একমাত্র ফ্ল্যাট। দ্বিতীয়ত আবাসনে কোনও সিসি ক্যামেরা ছিল না। ফলে খুব সহজেই লোকচক্ষু এড়িয়ে মধুসূদনের ফ্ল্যাটে বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত ছিল। আবাসন কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আবাসিকদের অভিযোগ পেয়ে, প্রচুর মহিলার আনাগোনা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, সবাই কাজের মহিলা। কেউ স্থায়ী হচ্ছে না। একটা অ্থায়ী লোক পেলে ভালো হয়। উনি বয়স্ক লোক। কথাটা সত্যি ভেবেছিলাম। এখন বুঝেছি, প্রতিবেশী হিসেবে আমরা কার্যত কালকেউটেকে ডেরা জমাতে দিয়েছিলাম। ভাগ্যিস পুলিস ধরেছে। রহড়া শহর তৃণমূল সভাপতি সুকণ্ঠ বণিক বলেন, শান্তিপ্রিয় ও অভিজাত রহড়ার এই ঘটনায় আমরাও তাজ্জব হয়ে গিয়েছি। আসলে নতুন আবাসনে প্রচুর বাইরের লোক বসবাস করছেন। কে কোথা থেকে কী উদ্দেশ্যে শান্ত এলাকায় এসে ঘাপটি মেরে বসে আছে, তা কেউ জানে না। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি আবাসনে সিসি ক্যামেরা, বহিরাগতদের আনাগোনা সংক্রান্ত রেজিস্টার মেনটেইন করা জরুরি। এই অস্ত্র ভাণ্ডারের পিছনে আর কেউ যুক্ত কি না, তাও খুঁজে বের করা প্রয়োজন।