প্রাক্তন পুলিসকর্মী, এখন উর্দি সরবরাহকারী, রহড়ার রিজেন্ট পার্কে একাধিক ‘পরিচয়’
বর্তমান | ০৫ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: ‘পুলিসে চাকরি করতাম। দপ্তরের বড় কর্তাদের অনুরোধে এখন পোশাক সরবরাহ করি’—শুধু এই পরিচয়ে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি রহড়া অস্ত্র কাণ্ডে ধৃত মধুসূদন মুখোপাধ্যায় ওরফে লিটন। কাউকে বলেছিলেন, সুদের কারবার রয়েছে, কেউ তাঁকে উকিলের সহকারি হিসেবেও জানতেন। এমনকী, নিজের আদি বাড়ির ঠিকানাও বিভিন্ন রকম দিয়ে রেখেছিল। ষাটোর্ধ মধুসূদনের বাড়ি থেকে বিপুল অস্ত্রভাণ্ডারের হদিশ এখন পেতেই তাজ্জব প্রতিবেশীরা। সবার মাঝে একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী বসবাস করছেন, ঘুণাক্ষরেও কেউ আঁচ পাননি। একের পর এক গজিয়ে ওঠা বহুতল আবাসনগুলিতে আরও কোনও ভয়ঙ্কর অপরাধী লুকিয়ে নেই তো? এই প্রশ্নই দিনভর পাক খেয়েছে শান্তিপ্রিয় রহড়ার অলিগলিতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রহড়ার অভিজাত শান্ত এলাকা রিজেন্ট পার্ক। একের পর এক বহুতল। ২০২০ সালে এখানেই তৈরি হয়েছিল ‘প্রতিমা মঞ্জিল’ নামে পাঁচতলার আবাসনটি। ওই জমি কলকাতা পুলিসে কর্মরত এক পুলিস কর্মীর ছিল। স্থানীয় এক সোনার দোকানের মালিক সেই জমিতেই আবাসন তৈরি করেছিলেন। সেই আবাসনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন মধুসূদন। ফ্ল্যাট কেনার সময় প্রোমোটারকে তিনি বলেছিলেন, আমার বাড়ি কামারহাটি। কিন্তু আত্মীয়দের সঙ্গে ঝামেলা চলছে। সাজানো গোছানো বাড়ির ছবি দেখিয়ে বলেছিলেন, বাড়ি ছেড়ে এখানে চক্রবর্তী পাড়ায় ভাড়ায় থাকছি। রহড়া এলাকা খুব পছন্দ হয়েছে। এখানেই থাকতে চাই। আপনার থেকে ফ্ল্যাট নেব। কী করেন? মধুসূদন জানিয়েছিলেন, তাঁর সুদের ব্যবসা। আবাসনের প্রোমোটার তথা রহড়ার নামকরা সোনার দোকানের মালিক রঞ্জিত কর্মকার বলেন, ওই লোকের মধ্যে এত শয়তানি লুকিয়ে আছে, স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। ফ্ল্যাট কেনার পর মাঝেমধ্যে দেখা হলে বলতেন, সম্পর্ক ভালো রাখবেন। শেষ দেখা তো সেই শ্মশানেই!
আবার আবাসনের সিংহভাগ আবাসিককে বলেছিলেন, আমি পুলিসে চাকরি করতাম। এখন অবসরে। অফিসারদের সঙ্গে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক। দু’চারজন পুলিসের বড় কর্তার নামও আওড়াতেন। বলতেন, তাঁদের অনুরোধে আমি এখন পুলিসের পোশাক সরবরাহ করি। আবার একজনকে বলেছিলেন, আমি তো হাইকোর্টে যাই। বড় উকিলের সহকারি হিসেবে কাজ করি। আবাসিকদের অনেকেই বলছেন, সবার সামনে নিজেকে একজন কেউকেটা হিসেবে মেলে ধরার অবিরত প্রয়াস ছিল মধুসূদনের। আবাসনের বাসিন্দা তথা জমির মালিক পরিবারের সদস্য সুপর্ণা ঘোষ দস্তিদার বলেন, ফ্ল্যাটের সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত থাকেন। দেখা হলে কুশল বিনিময়টুকুই হতো। ওঁনাকে অমায়িক হিসেবেই জানতাম। আবাসনের সব অনুষ্ঠানে আসতেন। কিন্তু এখন নানান খবর জানতে পারছি। নানান পরিচয় সকলকে দিত। আমরা আতঙ্কিত!