ইড়িঞ্চি কটেজে অনিয়ম? খতিয়ে দেখছে সিএডিসি, নিজস্ব কৃষি খামার, মাসে লাভ মাত্র ২৯ হাজার!
বর্তমান | ০৫ আগস্ট ২০২৫
শ্রীকান্ত পড়্যা, তমলুক: খেজুরির ইড়িঞ্চিতে সিএডিসি-র নিজস্ব খামারে দেশি মুরগি থেকে ডিম, গোরুর দুধ, নিজস্ব পুকুরের মাছ ও সব্জির জোগানের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনও কিছুর অভাব নেই। সরকারি ওই সংস্থার কটেজ এবং রেস্তরাঁয় আসা লোকজনকে নিজস্ব পুকুরের মাছ, ফার্মের মাংস, ডিম ও সব্জির রান্না পরিবেশন করা হয়। তবুও সরকারি সংস্থার ওই কটেজ ও রেস্তরাঁ সেভাবে লাভ করতে পারছে না। দীঘাগামী জাতীয় সড়কের ধারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জোড়া কটেজ, ডরমেটরি, রেস্তরাঁ, বোটিং, ফোয়ারা ও চিলড্রেন’স পার্ক সহ এলাহি পরিকাঠামো রয়েছে। তা সত্ত্বেও রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের অধীন ওই সংস্থা সেভাবে লাভের মুখ দেখছে না। এর কারণ খুঁজে বের করতে অনুসন্ধানে নেমেছে সিএডিসি। সিএডিসি-র ইড়িঞ্চি প্রজেক্টে লাভ না হওয়ার কারণ কী? যদি হয়েও থাকে তা কোথায় যাচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করেছে সিএডিসি।
দীঘাগামী ১১৬বি জাতীয় সড়কে ইড়িঞ্চিতে ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল সিএডিসি প্রকল্পের ‘ইকো অ্যান্ড ন্যাচারাল হাব’ উদ্বোধন হয়। প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করে জোড়া কটেজ, ডরমিটরি, রেস্তরাঁ, একসঙ্গে ৪০জনের বসার মতো স্থায়ী শেড, বোটিং, ফোয়ারা, চিলড্রেন’স পার্ক সহ বিনোদনের যাবতীয় উপকরণ তৈরি করা হয়েছে। দীঘা যাওয়ার সময় অনেকেই এখানে একটু জিরিয়ে নেন। খাওয়া-দাওয়া সারেন। অনেকে আবার রাত্রিবাসও করেন। এখানে জোড়া এসি কটেজ আছে। একটি কটেজের প্রতিদিনের ভাড়া ২৫০০টাকা। কয়েক ঘণ্টার অবসরের জন্য খরচ হবে ৭০০টাকা। ডরমিটরির ভাড়া ১০০০টাকা। এখানকার রেস্তরাঁ ও কটেজেরও দারুণ চাহিদা রয়েছে। সেখানে আসা লোকজনকে দেশি মুরগির ডিম ও মাংস, গোরুর দুধ, নিজস্ব পুকুরের মাছ এবং সিএডিসি-র ভগবানখালি ফার্মের সব্জির তরকারি দেওয়া হয়। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম কিনতে হয় না। তবুও সেভাবে লাভের দিশা দেখাতে ব্যর্থ এই ফার্ম।
গত এপ্রিল, মে ও জুন মাসে এখানকার কটেজ ও রেস্তরাঁয় সিএডিসি-র খরচ হয়েছে চার লক্ষ ৮৮হাজার ৭৪৫টাকা। ওই তিনমাসে কটেজ ও রেস্তরাঁ থেকে আয় হয়েছে পাঁচ লক্ষ ৭৬হাজার ৫৪৬টাকা। তিনমাসে লাভ ৮৭হাজার ৮০১টাকা। প্রতি মাসে গড় লাভ ২৯হাজার টাকা। জানা গিয়েছে, ওখানে ৩০জন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা কাজ করেন। প্রতিদিন ৮জন পালা করে ডিউটি করেন। আনস্কিলড সদস্যাদের প্রতিদিন ২৬০টাকা এবং সেমি স্কিলড সদস্যাদের ৩৯০টাকা দেওয়া হয়। এছাড়াও ম্যানেজার রাখা আছে। কটেজ ও রেস্তরাঁ থেকে আয়ের ৯০শতাংশ তাঁদের দৈনিক পারিশ্রমিক দিতে খরচ হয়। তবে, নজরদারি বাড়ালে লাভের অঙ্ক আরও বাড়তে পারে বলে সিএডিসি প্রকল্পের তমলুকের ডেপুটি প্রজেক্ট অফিসার উত্তম লাহা জানান। ঢিলেঢালা নজরদারির কারণে লাভের একটা অংশ ‘লিক’ হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
সিএডিসি-র ইড়িঞ্চি প্রজেক্টে ৬০০টি মুরগি আছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫০-৩০০টি ডিম পাওয়া যায়। ৩০টি গোরুর থেকে প্রতিদিন ১০০লিটার দুধ পাওয়া যায়। তারমধ্যে চণ্ডীপুরের একটি মিষ্টির দোকানে ৫০লিটার দুধ বিক্রি করা হয়। এখানকার কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য ও হোটেল খাতে গত তিনমাসে মোট ১৪লক্ষ ৭৯হাজার ৬২২টাকা খরচ হয়েছে। ওই চারটি ক্যাটেগরি থেকে এসেছে ১৬লক্ষ ৭২হাজার ৩৭৬টাকা। নজরদারি বাড়ালে আরও লাভের মুখ দেখার সুযোগ রয়েছে। আগামিদিনে সেরকম পদক্ষেপ নিতে চলেছে সিএডিসি।