গ্রাহকদের লক্ষ লক্ষ টাকা লুট, উধাও ডেবরার ডাক পিওন! পোস্ট মাস্টারকে অফিসে আটকে রেখে বিক্ষোভ
বর্তমান | ০৫ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: পোস্ট অফিসে টাকা রেখেছিলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু সেই টাকা আদৌ তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। অভিযোগ, গ্রামবাসীদের টাকা আত্মসাৎ করে চম্পট দিয়েছে পোস্ট অফিসের পিওন। এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে ডেবরা ব্লকের জালিমন্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের সাঁইতল এলাকায়। অভিযুক্ত পিওনের নাম অমল দোলই ওরফে শিবু। তাঁর বিরুদ্ধে ৫০ লক্ষের বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করছেন গ্রামবাসীরা।
জানা গিয়েছে, সোমবার গ্রাহকরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন পোস্ট মাস্টার। এরপর তাঁকে অফিস ঘরে আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন গ্রামবাসীরা। তড়িঘড়ি এলাকায় আসে ডেবরা থানার পুলিস। শেষ পাওয়া খবর অনুসারে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে। বাসিন্দাদের কথায়, ওই পোস্ট অফিসে নিয়মিত পোস্ট মাস্টার আসতেন না। তাঁর জায়গায় পিওনই সবকিছু দেখত। শিবু সিপিএম সমর্থক বলেও জানিয়েছেন বাসিন্দারা। জেলা পরিষদের নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ শান্তি টুডু বলেন, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। দোষীর কড়া শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। ওই এলাকার গরিব মানুষরা খুবই সমস্যার মধ্যে পড়ল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জালিমন্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের সাঁইতলের ওই পোস্ট অফিসে রেকারিং ছাড়াও বিভিন্ন স্কিমের আওতায় টাকা রাখেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসী ও উপভোক্তারা জানাচ্ছেন, ২০০০ সালের আগে থেকেই এই পোস্ট অফিসে উপভোক্তার সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ২০২১ সালের পর পোস্ট অফিসে নতুন পোস্ট মাস্টার আসেন। আর সেই সময় থেকেই সমস্যা তৈরি হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পোস্ট মাস্টার নিয়মিত আসেন না। প্রতি মাসে এক দু’-একদিন তাঁকে উপভক্তারা দেখতে পেতেন। গোটা পোস্ট নিয়ন্ত্রণ করতেন পিওন। সেই পিওনের মাধ্যমেই টাকার লেনদেন হতো। স্থানীয় বাসিন্দারা পোস্ট অফিসে গেলে টাকা জমা নেওয়া হতো ঠিকই। কিন্তু সেই টাকা আর অ্যাকাউন্টে জমা পড়েনি। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি টাকার হিসেব করতে শুরু করেন এক গ্রামবাসী। তিনি মাদপুর এলাকায় মূল পোস্ট অফিসে বই আপডেট করতে গিয়েই সমস্যায় পড়েন। তাঁর পোস্ট অফিসের বই আপডেট হওয়ার পরেই চোখ কপালে ওঠে। সেই সময়েই টাকা লোপাটের ঘটনা সামনে আসে। এদিন কথা হচ্ছিল সমর মাইতির সঙ্গে। অলিদাদপুর এলাকার বাসিন্দা সমরবাবু ২০০০ সাল থেকে এই পোস্ট অফিসে টাকা রাখেন। তাঁর বিপুল টাকার কোনও হদিশ নেই। সমরবাবু বলেন, ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল অবধি সব ঠিক ছিল। কিন্তু তার পর থেকেই যত সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। প্রথমে ৩৬ হাজার টাকা জমা করেছিলাম। এরপর ধাপে ধাপে আরও টাকা জমাতে শুরু করি। সেই টাকার পরিমাণ ৯৩ হাজার টাকার দাঁড়ায়। কিন্তু পোস্ট অফিসের বই আপডেট করার পর লক্ষ্য করেছি অ্যাকাউন্টে মাত্র ১৪ হাজার টাকা রয়েছে। বাকি টাকার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পিওনের ব্যবহার খুবই ভালো ছিল। তাই সকলেই বিশ্বাস করত। তার বাড়িতেও গিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও খোঁজ মেলেনি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুকুমার মাইতি বলেন, ওই পিওন মানুষের টাকা লুট করে চলে গিয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকার কোনও খোঁজ নেই। এই এলাকার মানুষ খুবই সমস্যায় পড়েছেন। দোষ করে থাকলে তাঁর শাস্তি চাই। স্থানীয় বাসিন্দা জয়দেব দাস বলেন, প্রশাসনের উচিত পিওনকে গ্রেপ্তার করা। পুলিস ঘটনাস্থলে এসেছে।