• সরগ্রামে ভোটার লিস্টে পাঁচ ভূতুড়ে নাম! সরগরম কাটোয়া মহকুমার রাজনীতি
    বর্তমান | ০৫ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। অথচ, বাস্তবে তাদের অস্তিত্ব নেই। এমনকি ভোটার তালিকায় বাড়ির যে নম্বর দেওয়া রয়েছে, সেটি অন্যের। এমন পাঁচ ভূতুড়ে ভোটারকে নিয়ে সরগরম কাটোয়ার রাজনীতি। জানা গিয়েছে, সরগ্রাম বৈঁচি গ্রামে ওই পাঁচজনের নাম ভোটার তালিকায় থাকলেও তাঁরা গ্রামের বাসিন্দাই নন। ঘটনাটি সামনে আসতেই ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি। তাদের দাবি, শাসকদল রোহিঙ্গাদের এভাবেই ভোটার তালিকায় নাম তুলেছে। এদের এনে ভোটের দিন ভোট দিয়ে দেওয়া হবে। গেরুয়া শিবিরের দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে তৃণমূল। কাটোয়া-১ ব্লক বিডিও ইন্দ্রজিৎ মারিক বলেন, ‘বিষয়টা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কোনও ভূতুড়ে ভোটারের নাম থাকলে তা বাদ যাবে।’

    কাটোয়া-১ ব্লকের সরগ্রাম অঞ্চলটি মঙ্গলকোট বিধানসভার অধীনে। অঞ্চলের মোট ১২টি বুথ। সেখানকার ২৭৬ নম্বর বুথটি বৈঁচি গ্রাম। ওই বুথের ভোটার তালিকায় দেখা যাচ্ছে, চারজন মহিলা সহ পাঁচ জনের নাম রয়েছে। সকলেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তালিকার ১১ নম্বরে নাম রয়েছে রাখী খাতুনের। স্বামীর নাম হোসেন শেখ। বাড়ির নম্বর ১৯০। কিন্তু বৈঁচি গ্রামে ওই নম্বরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ওই নামে কেউ থাকেন না। ৩৬ নম্বরে নাম রয়েছে বিউটি খাতুনের। ৩৭ নম্বরে রসিনা খাতুন। ৫৩৭ নম্বরে  সফিউদ্দিন শেখ ও ৫৪৫ নম্বরে নাম রয়েছে আলেনুর বেগমের। এঁদের কারও অস্তিত্বই নেই গ্রামে। অথচ, ভোটার তালিকায় চার বছর ধরে তাঁদের নাম রয়েছে। 

    বিজেপির মঙ্গলকোট-১ নম্বর মণ্ডল সভাপতি দেবজিৎ দে বলেন, ‘আমাদের ওই গ্রামে কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বসবাস করেন না। অথচ, চার বছর ধরে ভোটার তালিকায় পাঁচজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাম রয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, এরা রোহিঙ্গা হতে পারে। শাসকদল কারসাজি করে ভোট কারচুপি করতে এসব করেছে।’ মঙ্গলকোটের  বিজেপি নেতা অলোকতরঙ্গ গোষ্বামী বলেন, ‘ওই অঞ্চলে আমাদের লিড রয়েছে। শাসকদল চক্রান্ত করে এসব করছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হব।’ 

    এদিকে, তৃণমূলের কাটোয়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সুশান্ত পাঁজা বলেন, ‘ওই পাঁচ ভোটারের নাম বাদ দিতে আমরাই প্রথম সরব হয়েছিলাম।  বার বার সাত নম্বর ফর্মে আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি। ভূতুড়ে ভোটার চিহ্নিত করে আমরাই প্রথম কমিশনে অভিযোগ জানাই।  বিজেপি এখন ঘোলা জলে মাছ ধরতে ময়দানে নেমেছে। তাতে কোনও লাভ  হবে না।’ 

    এদিন গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, ‘ওইসব নামে আমাদের গ্রামে কেউ থাকেন না। অথচ, বাড়ির নম্বর দিয়ে রীতিমতো ভোটার তালিকায় নাম তোলা হয়েছে। এটা দেখে আমরা হতবাক হচ্ছি। প্রশ্ন উঠছে, কাটোয়া মহকুমায় ভূতুড়ে ভোটার তালিকা নতুন নয়। এর আগেও মৃত মানুষের নাম ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। প্রশ্ন উঠছে, কার গাফিলতিতে এমনটা ঘটেছে। বিএলওদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।’ 

    মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী বলেন, ‘গোটা বিধানসভা জুড়ে ভূতুড়ে ভোটার চিহ্নিত করে আমাদের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরেছিলেন। ওই পাঁচজনের নাম চিহ্নিত করে আমরাই প্রথম অভিযোগ জানিয়েছি। বিজেপি এখন সেসব পুরানো জিনিসকে ইস্যু করে এলাকায় অশান্তি পাকাতে চাইছে। মানুষ এখন ওদের চক্রান্ত বুঝে গিয়েছে।’
  • Link to this news (বর্তমান)