তৃতীয় সপ্তাহের শ্রাবণী মেলায় ৮ লক্ষ পুণ্যার্থী, তিস্তার ঘাটে ভক্তদের থেকে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ
বর্তমান | ০৫ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি ও সংবাদদাতা, ময়নাগুড়ি: জল্পেশে তৃতীয় সপ্তাহের শ্রাবণী মেলায় এসেছেন প্রায় ৮ লক্ষ ভক্ত। ভিড়ের নিরিখে যা রেকর্ড। সোমবার মন্দির কমিটির তরফে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের যাতে কোথাও কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখভালে ছিল ১৭০০ পুলিস কর্মী।
রবিবার বিকেল থেকেই ভিড় শুরু হয় জল্পেশে। রাত ১২টা নাগাদ ভিড় এতটাই বেড়ে যায় যে, ভিআইপি গেট খুলে দিতে বাধ্য হয় প্রশাসন। জল্পেশ মন্দির কমিটির সম্পাদক গীরেন্দ্রনাথ দেব বলেন, রবিবার প্রায় ৮ লক্ষ পুণ্যার্থীর ভিড় হয়েছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভিড় ছিল।
এদিকে, কলসিতে জল ভরতে তিস্তার ঘাটে প্রবেশের জন্য জল্পেশের পুণ্যার্থীদের কাছ থেকে জোর করে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। তিস্তার ঘাট পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি, নদীর ঘাটে আলো, ভক্তদের গাড়ি রাখার ব্যবস্থা, সিভিল ডিভেন্সের কর্মীদের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন, সবটা দেখভালে যারা টেন্ডার পেয়েছেন, পুণ্যার্থীদের কাছ থেকে তাদের ১০ টাকা করে নেওয়ার কথা। যদি কোনও পুণ্যার্থী স্নানের পর তিস্তার ঘাটে পুজো দিতে চান, সেক্ষেত্রে ধূপকাঠি ও পুরোহিতের জন্য আরও ১০ টাকা তারা নিতে পারেন, এমনটাই জানিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু পুণ্যার্থীদের অভিযোগ, হাতে ফাঁকা রসিদ ধরিয়ে দিয়ে কারও কাছ থেকে ৩০ টাকা, কারও কাছ থেকে ৪০ টাকা নেওয়া হয়েছে রবিবার। দাবিমতো টাকা না দিলে তাঁদের তিস্তার ঘাটে স্নান ও জল নেওয়ার জন্য নামতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ পুণ্যার্থীদের।
বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। ময়নাগুড়ির বিডিও প্রসেনজিৎ কুণ্ডু বলেন, তিস্তার ঘাটে কোনও পুণ্যার্থীর কাছ থেকে জোর করে বাড়তি টাকা নেওয়া যাবে না। বিষয়টি দেখছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যারা টেন্ডার পেয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য করা হবে।
ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুমুদরঞ্জন রায় বলেন, টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী তিস্তার ঘাটে পুণ্যার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। যদি নেওয়া হয়ে থাকে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
রবিবার জল্পেশে শ্রাবণী মেলায় যখন লক্ষ লক্ষ ভক্তের ভিড়, তখনই কিছু পুণ্যার্থীর বেপরোয়া আচরণে দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হয়। জলপাইগুড়িতে তিস্তা সেতুর উপর চেন টেনে শিয়ালদহগামী তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস দাঁড় করিয়ে নামার চেষ্টা করেন তাঁরা। বর্ষায় এখন ভরা তিস্তা। ফলে তিস্তা সেতুর উপর ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে যেকোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারত। এর আগে গত ২৭ জুলাই একইভাবে জল্পেশের কিছু পুণ্যার্থী চেন টেনে তিস্তা সেতুর উপর ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেয়। ওই ঘটনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সহকারী লোকো পাইলট তিস্তা সেতুর উপর দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের নীচে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে ভ্যাকুয়াম ব্রেক ঠিক করেন। এবার অবশ্য তিস্তা সেতুর উপর রেল সুরক্ষা বাহিনী ও রেলপুলিস থাকায় সুবিধা করতে পারেনি বেপরোয়া পুণ্যার্থীরা। চেন টেনে ট্রেন দাঁড় করিয়ে নামার চেষ্টায় আটজনকে গ্রেপ্তার করে জিআরপি। এর মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয় বলে জানান আরপিএফ ইনস্পেক্টর বিপ্লব দত্ত।