প্রতিনিধিদল-সহ শাহের সঙ্গে বৈঠকে শান্তনু, নাগরিকত্ব এবং এসআইআর-নথির বিষয়ে নয়া ‘সমাধানের’ আর্জি, বলছে সূত্র
আনন্দবাজার | ০৪ আগস্ট ২০২৫
রাজ্যে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ (এসআইআর) শুরুর আগে প্রতিনিধিদল সহযোগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করলেন ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর সঙ্ঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। মতুয়া ঠাকুরবাড়ি সূত্রের খবর, নাগরিকত্ব, এসআইআর এবং দেশ জুড়ে চলতে থাকা ‘বাংলাদেশি ধরপাকড়’ সংক্রান্ত বিষয়ে শাহের সঙ্গে শান্তনুর কথা হয়েছে। একগুচ্ছ আর্জি লিখিত আকারে শাহের হাতে তুলে দিয়েছে মতুয়া প্রতিনিধিদল। তবে অধিকাংশ আর্জির বিষয়েই প্রকাশ্যে কোনও আনুষ্ঠানিক বয়ান দেওয়া এড়িয়ে গিয়েছে মতুয়া মহাসঙ্ঘ।
এসআইআর বা নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জাহাজ প্রতিমন্ত্রী তথা বনগাঁর সাংসদের কী কথা হয়েছে, আনুষ্ঠানিক ভাবে সে বিষয়ে প্রকাশ্যে মতুয়া মহাসঙ্ঘ কিছু জানায়নি। তবে ঠাকুরনগর সূত্রের দাবি, এসআইআর প্রক্রিয়ার ফলে মতুয়া সমাজের কারও নাম যাতে ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে শাহকে অনুরোধ করেছেন শান্তনু। এ দেশে বসবাসকারী মতুয়া সমাজের প্রায় পুরোটাই যেহেতু দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশ (সাবেক পূর্ব পাকিস্তান) থেকে ভারতে এসেছে, তাই তাঁদের অনেককেই এখনও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নথি নিয়ে কিছু সমস্যার মুখে পড়তে হয়। সিএএ-র মাধ্যমে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পাকাপাকি বন্দোবস্ত তৈরি হলেও অনেকেই এখনও ওই নতুন আইনের আওতায় নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেননি। পহেলগাঁও হামলার পর থেকে দিল্লির নির্দেশে দেশ জুড়ে ভিন্দেশি চিহ্নিতকরণের অভিযান শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেককে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তার পাশাপাশি এসআইআরের জেরে বিহারে খসড়া ভোটার তালিকা থেকেও বিপুল সংখ্যক নাম বাদ পড়েছে। সেই একই প্রক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্যান্য রাজ্যেও শুরু হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। সরকার এবং কমিশনের এই সব পদক্ষেপ যাতে মতুয়াদের সমস্যা না বাড়ায়, সোমবার শাহের কাছে মূলত সে আর্জিই শান্তনুরা পেশ করেছেন।
নাগরিকত্ব তথা ভোটার তালিকায় মতুয়াদের বহাল রাখা যাবে কী ভাবে, সেই সমাধানসূত্রও শাহের সামনে প্রস্তাব আকারে পেশ করা হয়েছে। সিএএ-র মাধ্যমে আবেদন করে যাঁরা নিজেদের নাগরিকত্ব ইতিমধ্যেই নিশ্চিত করে ফেলেছেন, তাঁদের কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না। কিন্তু যাঁদের ক্ষেত্রে তা এখনও হয়নি, তাঁদের ক্ষেত্রে সিএএ আবেদন জমা দেওয়ার নথিকেই (অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ) যেন গ্রাহ্য নথি হিসেবে দেখা হয়, সেই আর্জি পেশ করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রে সম্প্রতি ‘বাংলাদেশি ধরপাকড়’ অভিযানে মতুয়া মহাসঙ্ঘের দেওয়া পরিচয়পত্র দেখিয়েও এক ব্যক্তি হেনস্থা এড়াতে পারেননি বলে অভিযোগ ওঠে। পরে সঙ্ঘাধিপতি শান্তনুর হস্তক্ষেপে তাঁর সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে ঠাকুরবাড়ি সূত্রের বক্তব্য। ওই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হলে সিএএ আবেদন জমা দেওয়ার নথি দেখালে যাতে সুরাহা হয়, শাহকে তাও নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন শান্তনুরা।
মতুয়া মহাসঙ্ঘের আনুষ্ঠানিক বয়ান অবশ্য বলছে, ‘‘সিএএ, অপারেশন সিঁদুর এবং অপারেশন মহাদেবের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। লিট্ল আন্দামান দ্বীপের নামকরণ হরিগুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে করার আর্জি দানানো হয়েছে। প্রমথরঞ্জন ঠাকুরকে (মরণোত্তর) ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার অনুরোধও জানানো হয়েছে।’’